ত্রিমাত্রিক ছন্দ~
"ত্রিমাত্রিক ছন্দ" নিয়ে অনেক কবিদের আগ্রহের কারণে আমি এখানে তার কাঠামো বিন্যাসটি সবার জন্য আমি পাঁচটি কাঠামো দিচ্ছি~ // চিহ্ন দ্বারা পর্ব বুঝিয়েছি।
শুধু মুক্তস্বর দিয়ে ত্রিমাত্রিক ছন্দ লিখা যায়।
মুক্ত/মুক্ত/মুক্ত/মুক্ত//
মুক্ত/মুক্ত/মুক্ত/মুক্ত//
মুক্ত/মুক্ত/মুক্ত/মুক্ত//
মুক্ত/মুক্ত
বোঝা নিয়ে/ হেঁটে হেঁটে //চলি আমি/ হাটে,
চারিদিকে /নীরবতা //মাঠে ঘাটে /বাটে।
স্বরবৃত্ত~ ৪+৪+৪+২
মাত্রবৃত্ত~ ৪+৪+৪+২
অক্ষরবৃত্ত~ ৮+৬
আবার বদ্ধস্বর রেখেও করা যাবে। কয়েকটি উদাহরন দিচ্ছি~
বদ্ধ/মুক্ত/মুক্ত/মুক্ত//
বদ্ধ/মুক্ত/মুক্ত/মুক্ত//
বদ্ধ/মুক্ত/মুক্ত/মুক্ত//
মুক্ত/ মুক্ত
টগবগিয়ে /পাগলা মনে// ছুটবো শুধু/ পিছে,
আম কুড়াতে/ ঐ পাড়াতে// নাচবে তারা/ মিছে।
স্বরবৃত্ত~ ৪+৪+৪+২
মাত্রবৃত্ত~ ৫+৫+৫+২
অক্ষরবৃত্ত~ ৮+৬
অথবা
বদ্ধ/মুক্ত/মুক্ত/মুক্ত//
বদ্ধ/মুক্ত/মুক্ত/মুক্ত//
বদ্ধ/মুক্ত/মুক্ত/মুক্ত//
বদ্ধ/বদ্ধ
পূর্ব কোনে/ মেঘ জমেছে//জমছে মনে /আন্ধার
বিশ্ব নিলো / গান্ধারিকে// রাগ- শকুনি/ গান্ধার
স্বরবৃত্ত~ ৪+৪+৪+২
মাত্রবৃত্ত~ ৫+৫+৫+৪
অক্ষরবৃত্ত~ ৮+৬
অথবা
বদ্ধ/মুক্ত/মুক্ত/মুক্ত//
বদ্ধ/মুক্ত/মুক্ত/মুক্ত//
বদ্ধ/মুক্ত/মুক্ত/মুক্ত//
বদ্ধ/মুক্ত
সন্তু কাকু/ রাগ করেছে// খেলতে তাকে/ নেয়না
মন্দিরেতে/ ডাক বাজাবে// সন্ধ্যা কালে/ বায়না।
স্বরবৃত্ত~ ৪+৪+৪+২
মাত্রবৃত্ত~ ৫+৫+৫+৩
অক্ষরবৃত্ত~ ৮+৬
অথবা
বদ্ধ/মুক্ত/মুক্ত/মুক্ত//
বদ্ধ/মুক্ত/মুক্ত/মুক্ত//
বদ্ধ/মুক্ত/মুক্ত/মুক্ত//
মুক্ত/বদ্ধ
বিশ্ব মাঝে/ খেলছো তুমি// ভয় পাবো না/ তোমায়
সৎপথেতে/ নিষ্ঠা রেখে// রাখবে মনে/ আমায়।
স্বরবৃত্ত~ ৪+৪+৪+২
মাত্রবৃত্ত~ ৫+৫+৫+৩
অক্ষরবৃত্ত~ ৮+৬
এছাড়া, আপনি আরও কিছু পরিবর্তন করতে পারেন। যেমন~ এই কাঠামোগুলির যে কোন পর্বের একটি বা দুটি বদ্ধস্বরকে মুক্তস্বর করলে, আরও কয়েকটি কাঠামো দাড়াবে।
স্মরণযোগ্য~ পর্বের প্রথমে বদ্ধস্বর ব্যবহার করা হলে তা যদি আলাদা একটি বদ্ধস্বর হয় তাহলে সমস্যা হবে। তখন অক্ষরবৃত্তের মাত্রা গননায় সমস্যা হবে। যেমন-
ভাব, ভাত, রাত, সাথ, জাত, নাই, খাই, যাই, কম, দম, নাম, ফাঁক, দূর, সুর, বদ, পদ, নদ, রদ, হৃদ ইত্যাদি।
তাই আলাদা একটি শব্দ বদ্ধস্বর হলে তা ব্যাবহার করা যাবে না। তাহলে অক্ষরবৃত্তে মাত্রা গণনায় সমস্যা হবে।
কাঠামো দাড়ানোই মূল কথা নয়, এভাবে প্রতি পংক্তিতে সাজালে দ্বৈতবৃত্তরীতি হবে, যেখানে স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত এক সাথে থাকবে।
দ্বৈতবৃত্তরীতি অর্থ্যাৎ কবিতার প্রতি পংক্তিতে মুক্ত ও বদ্ধ স্বরের নিজ নিজ সংখ্যা সমান থাকে।এই নির্দিষ্ট ক্রম বিন্যাস ই দ্বৈতবৃত্তরীতি। এর পর্যায় তিনটি, এটা দ্বিতীয় পর্যায়ের।
এই কাঠামোতে স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত; ত্রিবিদ নিয়মেই পংক্তির দৈর্ঘ্য পরিমিত হতে পারে। তাই একে ত্রিমাত্রিক ছন্দ বলে।
এককথায়~ একে দ্বৈতবৃত্তরীতির ত্রিমাত্রিক ছন্দ বলে।
কবিদের কাজে আসলে ও অনুশীলন হলে সতেন্দ্রনাথ দত্ত ও দ্বিজেন্দ্রনাথ রায় দ্বৈতবৃত্তরীতিতে যে সম্ভবনার আভাস রেখে গিয়েছিলেন, বাংলা ছন্দে তার প্রয়োগ হলে অভিনবত্ব আসবে।
লেখা তে কোনো ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।