সেদিন আমরা কেউ কোন কথা বলতে পারিনি,সে এক  অন্য অনূভূতি!
তার বলা   প্রতিটা শব্দ তীক্ষ্ণ ফলার মত বিঁধেছে!
কত ভাবে জীবনের মানে খুঁজেছি,জীবনের কত রঙ রুপ গন্ধ পেয়েছি ।
জীবনকে জানতে কত দার্শনিক তত্বের জটিল ভাবনার সমুদ্র জলের ছিটে ফোঁটার স্পর্শ পেতে চেয়েছি । জীবনকে বুঝতে চেয়েছি কত বার কত অচেনা পথ হারিয়ে!  
তবু কতটুকু বুঝতে পেরেছি!


সেদিন আমরা কেও কোন কথা বলতে পারি নি,সে এক অন্য অনুভূতি!
সে রাতে আমরা বন্ধুরা রাতের অন্ধকারে বেড়িয়েছিলাম উদ্দেশ্য হীনভাবে!
রাত তখন বেশ গভীর, পৌছেছিলাম মানিকচকের গঙ্গার পাড়ে!
নিস্তব্ধ রাতে গঙ্গার পাড় ভাঙার শব্দ, এক অদ্ভুত যন্ত্রনা ।
চোখের সামনে যে বাড়িটি  জলের তলায় তলিযে গেল,
সে  বাড়ির  সবাই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে, শেষটা   দেখতে  কষ্ট হবে যে।

সেদিন আমরা কেউ কোন কথা বলতে পারি নি,সে এক অন্য অনূভুতি!
আলো-আঁধারের মাঋে বুঋতে পারি নি , আমরা ছাড়াও আর এক জন দুর থেকে সবটা দেখছে।
কাছে গিয়ে আলাপ করলাম, জানতে চাইলাম বাড়িটি কি ওর।
লোকটি হেসে বললো না,শেষ বেলায়  সবাই এভাবেই আমার কাছে ছেড়ে দিয়ে যায় সকলের প্রিয় সম্পদ !
কথা গুলো কানে বাধলো।
ঠিক অর্থ বুঝলাম না কিন্তু গভীর কিছু লুকিয়ে এটা বুঝতে অসুবিধে হয়নি।

সেদিন  আমরা কেও কোন কথা বলতে পারি নি,সেএক অন্য অনূভুতি!
তখন মেঘে ঢাকা চাঁদ মেঘের কোল থেকে নেমে একটু একটু আলো দিচ্ছে ।
লোকটিকে পাশে বসিয়ে আমরা জানতে চাইলাম  তার বলা কথার প্রকৃত মানে,
সে এই  গ্রামের জামাই, আজ গঙ্গা ভাঙনের  শিবিরে, ওদের বিয়ে হয়েছে ,ওরা স্কুল শিবিরে আছে ।  
যে বাড়িটি জলের তলায় তলিয়ে গেল সে বাড়িতে ওর নতুন বৌয়ের কত স্মৃতি লুকিয়ে,তাই শেষ পরিনতি  চোখে দেখতে পারবে না ,তাইতো শেষ পরিনতি দেখার জন্য সে একাকী একজন!
সর্বশেষ কাজটা ওকেই করতে হবে,ওর যেএটাই পেশা !
শ্মশানের চুল্লিতে শেষে ঠেলা দিয়ে চুল্লির আগুনে ঢোকানোর কাজটা যে ওকেই করতে হয়।

সেদিন কেউ কোন কথা বলতে পারি নি,সেএক অন্য অনুভুতি!
সে রাত্রিতে ওর কথা শেষে ওর চোখের কোনে জমা জল দেখেছিলাম।
যাওয়ার আগে ও শুধু বলেছিল এবার যাই, ওকে বলতে হবে সব শেষ হয়ে গিয়েছে ।
যেমন রোজ শবদাহের শেষে কত কত মানুষ কে বলতে হয়!
আর হাতে তুলে দিতে হয় কিছুটা  ছাই। সে বলেছিল, এটাই জীবন।
এটাই জীবনের চরম পরিনতি!

সেদিন আমরা কেউ কোন কথা বলতে পরি নি ,সে এক অন্য অনুভূতি!
সেদিন সে রাতে,সমাজ বিজ্ঞান,আইন ও বিজ্ঞানের  তিন অধ্যাপক  খোলা আকাশের নিচে, গঙ্গার ভয়ঙ্কর রুপ সাক্ষী রেখে জীবনের   অন্য  এক  পাঠ নিয়েছিল!