হতাশার কবিতা লিখবোনা বলে পণ করেও
হতাশার কবিতাই লিখছি আমি।
কেননা
অভাগা যেদিকেই যাচ্ছে সাগর শুকোতেই থাকছে,
হাজারটা ঝিনুক কুড়িয়েও একটি মুক্তো মিলছেনা।
অথচ সুযোগ ছিলো বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মুক্তো চাষের,
মাছের খাদ্য খাইয়েও করা যেতো বিশাল হাঙর লালন।
তথাপি আমাদের সমাজ
দুর্বিপাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতেই বেশি মজা পায়,
কারণ স্থুল কৌতুক করার মানুষের সংখ্যায় এখানে বেশি।
এই ডেমোক্রেসির মেজোরিটি পাব্লিক ক্রেজি
তাই খুব সহজেই এদেরকে এটা-ওটা ঝুলিয়ে
মুলোর লোভ দেখিয়ে, ঘোল খাইয়ে
ছুড়ে ফেলা দেয়া যায় ল্যাট্রিনে—
এই জনগণ বদনার নল থেকে ঠিকভাবে পানি ঢালাটাও জানেনা।
কিন্তু পাণ্ডার মতো বাঁশ খেতে হচ্ছে আমাদের
কেননা আমরা নাদুসনুদুস, আমরা নরম;
আচাঁছা বাঁশ আমাদের গুহ্যদেশ দিয়ে ঢুকিয়ে দিলেও
আমরা মুখ ফুটে “উহ” শব্দটি পর্যন্ত করিনা।
তাই জন্ম-জন্মান্তর থেকে বাঁশই আমাদের
প্রধাণতম খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে
এবং আশা করা যায় আরো একশো কোটি বছর বিবেচিত হতে থাকবে।
আমি জানি, আমি সচেতন এ ব্যাপারে যে
এই কবিতায় কোনো ছন্দ নেই;
এটাকে কলমের এক খোঁচায় কেটে দেয়া যায়
অকথ্য গদ্য বলে ছুঁড়ে ফেলা যায়।
কিন্তু আমি কাকে ছুঁড়ে দেব? সত্যকে?
প্রত্যেকদিন যে বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছি, সেটাকে?
নাকি আমার জীবনটাকেই চুলোর মধ্যে পুরে
আগুন জ্বালিয়ে দেব দেশলাইয়ের একটা মাত্র কাঠিতে?
নাকি বন্ধক রাখা শুরু করব আত্মাকে?
হয়ে যাবো ডক্টর ফস্টাস?
এই গোঁড়া সিস্টেম যেখানে একটা প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারবেনা
সেখানে এনার্কিস্ট না হয়ে আমি কি হবো?
আমি সমাজকে গড়তে চেয়েছিলাম,
তোমরা আমাকে ভাঙতে বাধ্য করছো।
আমি ভেবেছিলাম বদলে দেব তোমাদের
তোমরা আমাকেই বদলাতে বাধ্য করছো?
আর কতোটা বদলালে নাদের আলী সুনীলকে তিন প্রহরের বিল দেখাবে?
আমার জীবনধারণের খরচা বেড়ে গেছে তিনগুণ,
ভাই নাদের আলী আমি আর কতোটা বদলাবো?
আর কতোটা মানিয়ে নেব নিজেকে এই হতচ্ছাড়া ব্যবস্থায়?
পঞ্চপাণ্ডবের মতো আমারো তাই ছন্দ ছুঁড়ে ফেলে দিতে ইচ্ছে করছে,
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে মারতে ইচ্ছে করছে কৌরবদের,
আগুন জ্বালাতে ইচ্ছা করছে পৃথিবীতে।
হে ভগবান, আমি কি করব?
কি করলে শান্ত হওয়া যাবে এই অশান্ত নরকে?
কি করলে, ভগবান?
আমি তোমাকেও মানিনা কারণ
তুমি থোড়াই কেয়ার করো আমাদের!
তুমি ব্যস্ত তোমার প্রেরিত “পুরুষদের” রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণে
আর যারা নারী তাদেরকে গণিমতের মাল ভেবে যাচ্ছেতাই করার সুযোগ দিতে।
তুমি ব্যস্ত তোমার গুনগান নিয়ে
আর এখানে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে সাইন নেয়া হচ্ছে ফাঁকা স্টাম্পে?
আমাকে বাঁচানোর জন্য তোমার অবতার নিয়ে কে আসবে, ভগবান?
তুমি নিজে?
আমি আর পারছিনা
আমি আর পারছিনা মাথায় করের বোঝা নিয়ে
রোজ রাস্তায় বেরোতে,
লক্ষ-কোটির বাজেটে নিজের ভাগের পয়সা খুঁজতে।
আমি আর পারছিনা শালা ট্যাক্সের নামে এই চাঁদাবাজি সহ্য করতে।
আমি অসহায়, আমি ঠাঁই চাই।
আমি একটি বটগাছ খুঁজছি যেন
একটু ছায়া পাওয়া যায়।
আমি ক্লান্ত, আমার কলম ক্লান্ত।
অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধিতে আমার কবিতার খাতা স্ফীত হয়নি,
তাই আমি ছন্দ পারছিনা,
কোন বৃত্তে অক্ষর আটকাবে সেটা নির্ণয়ের জ্ঞান আমার নেই,
আমি শব্দ আর মাত্রার মধ্যে কোনো পার্থক্য আর খুঁজে পাচ্ছিনা।
আমি এবার রেহাই চাই, অতিদ্রুত মুক্তি চাই—
কিসের হাত থেকে মুক্তি চাচ্ছি শালা সেটাও জানিনা।
১২ জুন ২০২২।