খুব বেশি দূরে নয়, ছাদ থেকে দেখা যায় আমার ঘরের—
একাত্তরের স্মৃতি-বিজড়িত এক বিষণ্ন বধ্যভূমি।
তবু আমি যাইনা কাছে, খুবেকটা কখনোই;
কেননা যতোবারই তাকাই ওদিক
ইতিহাস বারবার মর্মর বেদনায় কাঁপে—
সংঘাত যে জাতির নিয়তি, সে জাতি পারেনা কখনোই ক্রুরতা এড়াতে।
তাই সে একাত্তরে, যুদ্ধ যখন খুবলে খাচ্ছে মানুষের জীবন
হানাদার-দোসররা চলাচ্ছে ধ্বংসযজ্ঞ, তছনছ করে দিচ্ছে গ্রাম-কে-গ্রাম—
ভীত-সন্ত্রস্ত্র মানুষ তখন পালাচ্ছে, আশ্রয় খুঁজছে সীমান্তের ওপারে
যেন জীবন নিয়ে ফিরে আসতে পারে—এই পবিত্র ভূমি মুক্ত হবার পরে।
তারিখ সেদিন বিশ মে, সন উনিশশো একাত্তর;
স্থান চুকনগর—যা এখন খুলনা জেলার এক সাধারণ মফস্বল শহর—
সেদিন সেখানে হাজারে হাজার মানুষ সমবেত
কেননা এখান থেকে পাশের দেশ ভারত বেশ কাছে—
তাঁরা এসেছেন, আশ্রয় নিয়েছেন বিলের ধারে
সহিহ-সালামতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে নিরাপদ ঠাই খুঁজে নিতে।
কিন্তু বিধিবাম! অংকের বিশ যেন নিমিষেই বিষ হয়ে গেলো!
সাপের ছোবল নিয়ে এলো পাক-ভীরু বাহিনী—
সমানে ছুড়লো গুলি, চালালো বেয়োনেট!
কি শিশু! কি বৃদ্ধ! কি পুরুষ! কি নারী!
চারিদিকে লাশ আর লাশ! অগণিত নিথর জনতার লাশ!
ইতিহাস বলে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে এটাই সর্ববৃহৎ গণহত্যা—
বধ্যভূমির ঐ স্মৃতিস্তম্ভের দিকে তাকালে মনে হয় আজও
হাজারো শহীদের রক্ত যেন এখনো বইছে চুকনগরে।
(গণহত্যা দিবসে মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা।)