কমলাপুর রেলস্টেশনে তির্থের কাকের মতন বসে আছি ট্রেন নামক পংখি রাজ ঘোড়া টি কখন আসবে সেই অপেক্ষায়। কিন্তু ট্রেন যে মেড ইন বাংলাদেশি ট্রেন তাই যদি বলে ১০ টায় ট্রেন আসবে সেই ১০ টা কি সকাল ১০ টা না রাত ১০ টা তা মনে হয় খোদ রেল মন্ত্রীও জানেন না। তাই নিস্ক্রিয় দর্শকের মতন বসে বসে ট্রেনের অপেক্ষায় প্রহর গুনছি। ঠিক তখনই দেখলাম এক ভিক্ষুক দম্পতি সবার দ্বারে দ্বারে গিয়ে সাহায্য চাচ্ছে। ভিক্ষুক দম্পতির পুরুষটি অন্ধ আর মহিলাটি স্বাভাবিক তাই মহিলাটিই তার স্বামী কে নিয়ে সবার নিকট সাহায্য চাচ্ছে। কেউ হয়ত ভিক্ষা দিচ্ছে আর হয়ত কেউ দিচ্ছে না । যথারিতি তারা আমার নিকট আসল আমি তাদের কে নামমাত্র কিছু দান করিলাম। ভিক্ষুক দম্পতি কে দেখে মনে হল তারা খুবই ক্লান্ত। মনে হচ্ছিল তারা আর হাটতে পারছে না। মনে হচ্ছিল এই হাড় ভাংগা জৈষ্ঠের রোদে আর দারিদ্রতার কষাঘাতে তারা এই জিবনযুদ্বের পরাজিত সৈনিক। কিন্ত তারপরও জিবন নামক এই সিমাহিন কস্টের ময়দানে তারা যুদ্ধ করেই যাচ্ছে। যা হক,আসল কথায় আসি,কিছুক্ষণ পর দেখলাম এই ভিক্ষুক দম্পতি ঊধাও কোথায় গিয়েছে আমি তা লক্ষ্য করিনি হয়ত জীবিকার তাগিদে অন্য কোথাও গিয়েছে। ঠিক তার ৫ মিনিট পর আমি এই ভিক্ষুক দম্পতি কে আবিস্কার করতে পারলাম আমি যেখানে বসে ছিলাম তার পিছনে এই দম্পতি বসে আছে। তাদের হাতে ১৬ টাকার একটি মোজোর ছোট ড্রিংকসের বোতল ছিল। হয়ত এই হাড় কাঁপানো রোদে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে ঘুরতে তৃষ্ণার্ত হয়ে তারা এই ছোট মোজোর সামান্য পানি দ্বারা নিজেদের তৃষ্ণা মিটাবে। আমি লক্ষ্য করলাম, এই ভিক্ষুক দম্পতির অন্ধ পুরুষটি তার স্ত্রী কে বলছে,,"বউ গ এই বোতলের মুখখা ডা খুলে পানি খাও" কিন্ত অন্ধ ভিক্ষুকটির বউ টি বুজতে পেরেছিল যে যদি সে এই ছোট বোতলের পানি পান করে তাহলে হয়ত তার স্বামি তার তৃষ্ণা ভাল ভাবে মিটাতে পারবে না। তাই সে বোতলটি নিয়ে পানি পান না করে তার স্বামি কে বলল যে সে পান করেছে। কিন্ত তার স্বামি অন্ধ হওয়ায় তা বুজতে পারে নি। এই ভাবে প্রতিবার অন্ধ ফকিরটি সামান্য পানি পান করে তার বউ কে দেয় সে যেন পান করে কিন্ত বউ টি তার স্বামির প্রতি অগাত ভালবাসা থাকার কারনে প্রতি বারই পানি পান না করে স্বামী কে বলল যে সে পান করেছে। এভাবে অন্ধ ফকিরের বউ নিজে এক বিন্দু পানি পান না করে তার স্বামী কে সম্পুর্ন মোজোর পানি পান করাল।আমি এই ভিক্ষুক দম্পতির স্বার্থহীন ভালবাসা দেখিয়া বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে,,, পাপাচারে জর্জরিত এই মডার্ন যুগেও এই রকম লাইলি মজনু, ইঊসুফ জুলেখা আর রোমিও জুলিয়েট এর মতন নিঃস্বার্থ ভালবাসা স্বামি স্ত্রী এর মধ্যে বিদ্যমান। যেই মডার্ন যুগে আজ স্বামি তার স্ত্রী কে এবং স্ত্রী তার স্বামি কে স্বার্থ ব্যতিত ভালবাসে না, যেখানে পরকিয়া নামক নিকৃষ্ট পাপে আজ স্বামী স্ত্রী উভয়ই লিপ্ত, যেখানে আজ বিবাহ নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার চেয়ে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনাই বেশি ঘটে। যেখানে আজ প্রেমিক প্রেমিকারা ভালবাসার নামে আইয়েমে জাহিলিয়াতের নোংরামিকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে। সুতরাং সেই মডার্ন নামক নোংরা যুগেও স্বামী স্ত্রীর মধ্যে এই রকম স্বার্থহীন ভালবাসা সত্যিই বিরল !! হয়ত এই ভিক্ষুক দম্পতির অর্থ বিত্ত মান সম্মান কিছুই নেই। হয়ত দারিদ্রতার নিষ্ঠুরতায় ওদের জিবন আজ বিপর্যস্ত। কিন্তু তবুও ওদের মধ্যে পবিত্র ভালবাসা নামক যেই পরশ পাথর বিদ্যমান সেই পরশ পাথরের ছোঁয়ায় আজ তাদের এই দাম্পত্য জীবন স্বর্গে রুপান্তরিত হয়েছে। ভিক্ষুক দম্পতির এই স্বর্গীয় ভালবাসা দেখিয়া কবির কবিতার সেই পংক্তিটি মনে পরে গেল,,,,,
কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক কে বলে তা বহুদুর?
মানুষের মাজে স্বর্গ নরক মানুষেতেই সুরাসুর!!!!