তুমি তোমরা আর পৃথিবী, যখন যাও ঘুমিয়ে,
ঝি ঝি পোকার সাংসারিক কোলাহল তখন বাড়ে,
চাঁদ টা বাঁকা হলো এইতো কিছু সময় আগে,
জোনাকির মিথ্যে আলোয় আধো পথ জ্বলে উঠে-
শেষ দেখেছিলে কবে?
ঘুম থেকে উঠে অথবা ঘুমের ঘুরে-
কিছু চোখে হলদে রং ধরে,
জেগে থাকতে হবে বৈ কি- রাত যে অনেক বাকি!
তারা রাত জাগে।
জাগিয়ে রাখবার নয়,জেগে থাকবার তাগিদে
অনেক ঋণ যে জমে আছে তাদের রাতের কাছে!
কিছু পথিকের সাথে, দেখা হয়েছিল পথে,
বিষে ভরা হেমলক অথবা ঘ্রাণ সমৃদ্ধ- জবা হাতে।
তাদের মধ্যেই কেউ ছিল প্রেমিক
ছিল নাবিক অথবা শ্রমিক
অথবা অন্যের আহারে ঠোকরানো শালিক।
সবাই ঘরে ফিরে রাতে- তবু ফিরে না আপন ঘরে!
দূরে স্টেশনে আলো জ্বলে স্টীমারে,
অনিচ্ছুক কর্ণপাত ঘটে স্টীমারের হুংকারে,
যেন চোখ রাঙ্গিয়ে বলে আমাকে আটকায় কে?
নদীর প্রতিটি জলকণাকে
আঘাতের- স্বাদ আস্বাদনে-
আমি চললাম,
আমার শহরে,
যেখানে মানুষ আর ধুলো উড়ে!
তার চলার গতি বাড়ে -
বিস্তৃত অস্তিত্বের ছবিটা জলে মিশে- নড়বড়ে,
যেন জল আর স্টীমারে, ছন্দহীন নৃত্য করে!
ছল-ছল-ছল,
এক অদ্ভুত সঙ্গীতালয়ে।
যেন জলের মুখ গেছে খুলে,
বুক ফাটা চিৎকারে বলে
চল,চল! ঘরে ফিরে চল
মায়ায় তৈরি তুই মানুষ,
মায়ার টানেই ঘরে ফিরে চল।
কেউ কেউ কান পেতে শুনে!
কিন্তু! সব ঘোর কাটে সবগুলো স্টীমারের বিকট হুংকারে,
জলের কান্না হারাতে থাকে দূর থেকে আরো দূরে!
যতো আর্তনাদ যেন শুধুই জানবে স্টীমারে,
ভুলেও যাবে না বলা অন্য কারও রে!
সে চলে যায়!
তার চিমনির ধোঁয়া, গাঢ়ো থেকে আরো গাঢ়ো হয়-
হলদে রং করা চোখ গুলো অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রয়-
জোনাকির মিথ্যা আলো তাদের আরো মিথ্যে মনে হয়।
কিন্তু ফিরবে কি কেউ-কোনদিন-কবে?
হারিয়ে গেছে ফেরার প্রয়োজন কালের গর্ভে!
সব চোখ-
হলদে হয়ে যাওয়া চোখে,
ঘুমের ঘুরে,
ঘুমিয়ে-
প্রতিটা রাত জাগে-
জেগে থাকবার তাগিদে।
অনেক ঋণ যে জমে আছে তাদের রাতের কাছে!