জানো তিলোত্তমা!
সেদিন সেই ছোট্টটি ছিলে তুমি,
মায়ের কোলে খিল খিল করে হাসছিলে।
তোমার মায়ের হাতের চুড়ির আঘাতে-
তোমার পিঠে দাগ পড়েছিল।
মায়ের সে কি কান্না,
সেকি হাহাকার,
সমস্ত দিনের জন্য মুখের হাসিটা কোথায় মিলিয়ে গেল। কাজের ফাঁকে কতবার এসে দেখল,
তোমার শরীরের আঘাতটা।
বাবা এসে তোমাকে কোলে তুলে মাকে বলেছিল,
"ওই চুড়ি, আর পড়তে হবে না।"
তাদের আদরে যত্নে-
তুমি তোমার ব্যথাটা ভুলে গেছিলে।
তুমি যখন হাঁটতে শিখছিলে,
পড়ে গিয়ে ব্যথা পাবে,
এই ভয়ে ওরা তোমার পাশে পাশে-
সারাক্ষণ হাত বাড়িয়ে থাকতো।
জানো তিলোত্তমা?
তুমি যখন ভুল করে ছাতাটা ফেলে স্কুলে যেতে,
সূর্যের প্রখর তাপ তোমার শরীরকে দগ্ধ করবে,
এই দুশ্চিন্তায় বাবা ছুটতেন ছাতা নিয়ে-
তোমার পিছু পিছু।
খেলার মাঠে পড়ে গিয়ে যখন তোমার হাঁটুর চামড়া ছড়ে যেত,
বাবা-মা তোমায় নিয়ে ছুটতেন ডাক্তারখানায়।
ঘরে ঘরে তিলোত্তমারা এই ভাবেই বড় হয়।
কিন্তু আজ তোমার শরীরে আঘাতের পর আঘাত, আঘাতের পর আঘাত।
আজ মা বাবা এই অচেতন শরীরটাকে চেয়ে চেয়ে দেখছেন,
আর বুকফাটা আর্তনাদে আকাশ বাতাস কাঁপাচ্ছেন
মা-বাবা কি করে সহ্য করবেন,
হাতের আঙ্গুল ভেঙে দেওয়া,
নখ উপড়ে নেওয়া,
ঘাড়ে আঘাত, পেটে আঘাত, যোনিতে আঘাত,
সারা শরীরে পিশাচের দাঁতের কামড়,
প্রতিহত করার ব্যর্থ চেষ্টা।
শরীরটার উপর এতটা অত্যাচার-
কেমন করে সহ্য করলে তিলোত্তমা? কেমন করে?
আজ তোমার হয়ে বিচার চাইতে সরব হয়েছে সারা দেশের নারী পুরুষ।
আজ তোমার হয়ে কথা বলবে তোমার বন্ধুরা,
তোমার দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মীরা,
বিভিন্ন দপ্তরের বড় বড় আমলারা,
নেতা-মন্ত্রী বুদ্ধিজীবীরা ।
একদিন সবাই থেমে যাবে।
নদী আবার তার আগের নিয়মে বয়ে যাবে।
সূর্য সেই পুরাতন নিয়মে সকাল বেলার আকাশ রাঙাবে।
শুধু অসহায়, আহত, দগ্ধ দুটো হৃদয় উল্টো স্রোতে বইবে।



(কবিতা নয়, শুধু মনের কথা)