উঠানের এক পাশে চোখে জল নিয়া,
দাঁড়ায়েছি যবে আমি শিশুকে চাহিয়া,
ডানে-বাঁয়ে কাঁদে সবে, সমুখেতে প্রাণ,
শেষকালে অভাগিনী দিয়া গেল দান।
ছোট ঘরে ছোট আশা, ছোটো ছোটো কথা,
শিশুর মুখেতে হইয়া নিদারুণ ব্যথা,
ফুটিতেছে যেন এক ব্যথার কুসুম,
মধ্যরাতে ভাঙিল যে পড়শির ঘুম।

আগে পিছে, ডানে-বাঁয়ে, কত শত জন,
আসিতেছে, যাইতেছে, কাঁদিতেছে মন।
ফুটিতেছে মুখে মুখে বেদনার বানী,
কত জন কত কথা করে কানাকানি।
দেখিয়া তা ভোর হইল, কাটিল যে নিশি,
কাটিলনা কোনো ক্রমে বেদনার দিশি।
ঝরিতেছে চোখে চোখে অশ্রু বারিধার,
হৃদয়ে বহিছে সবে যন্ত্রণার ভার।

জীবনের পথে পথে হাসি-কান্না ঢালি,
যে পথ ফেলিয়া আসে চাঁদ এক ফালি,
সে পথে ফিরিয়া দেখা হইল না আর,
হইয়া গেল অভাগিনী ভব নদী পার।
শিশুপুত্র রাখি গেলা পৃথিবীর 'পরে,
মৃত্যুকালে স্বামী ছিল ঘরের বাহিরে।
বারেক দেখিবে স্বামী, ছিল অভিলাষ,
পুরিতে দিলে না বিধি সে মনের আশ।

চির নিদ্রায় গৃহবধূ বাহিরে শয়ান,
দেখিতে আসিল কত আত্মীয়-স্বজন।
জোগাইয়া আনিল কেহ শবকাষ্ঠ, তিল,
কেহ আয়োজন করে হরিতকি, ফুল,
কেহ বা আনিল তুলা-স্বর্ণ-রূপা-জল,
তুলসী আনি কেহ মুছে আপন অশ্রুজল,
বাড়ী ছাড়ি যায় বধূ সীমানার ওপারে,
স্মৃতিগুলি থাকে শুধু সংসারের তরে।

বধূরে যখন তোলে চিতার উপরে,
মুখ থেকে যেনো তার সোনা রোদ ঝড়ে,
শিশুপুত্র অগ্নিহস্তে চারিধার ঘুরে,
পুরোহিত সাহচর্যে মন্ত্রোচ্চার করে।
বারে বারে জননী রে ফিরিয়া সে চায়,
প্রণাম করিয়া বলে "চা খাবি মা আয়"।
হায় রে অবুঝ শিশু, বুঝিলো না হায়,
জননী যে তারে ছাড়ি যায় চলে যায়।

12-06-2002
(উল্লেখিত শিশুটি আজ 24 বছরের যুবক)