আজ হটাত ই কেউ যদি আমায় প্রশ্ন করে আজ থেকে বেশ কিছু বছর পর তুমি কার কবিতা পড়তে বা আলোচনা করতে চাইবে? বা ধরো কবিতার খুঁটিনাটি, ভাব, ভাষার বিবর্তন, আঙ্গিক ও আধুনিকতা নিয়ে কাঁটা ছেঁড়া করা যাবে? তা হলে যে গুটি কয়েক আধুনিক কবির নাম চট করে মাথায় আসে তার মধ্যে অবশ্যই এক জন কবি হবেন যশোধরা রায়চৌধুরী।

জন্মগ্রহণ করেন কোলকাতায় ১৯৬৫ সালে; পিতা দিলীপ রায়চৌধুরি। প্রেসিডেন্সী কলেজে দর্শনশাস্ত্র নিয়ে পড়াশুনো করেছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রশাসন দপ্তরে স্বল্পকাল কাজ করার পর ১৯৯১ সালে যোগদান করেন ইন্ডিয়ান অডিট সার্ভিসের দায়িত্বপূর্ণ পদে। পাশাপাশি সমানতালে চলে লেখালেখি। ১৯৯৩ সালে কবি হিসেবে প্রথম আত্মপ্রকাশ। তার পর থেকে নিয়মিত বিভিন্ন পত্র পত্রিকা, বই ও ইন্টারনেটে লেখা লেখি।

কবি কবিতায় তার ভাবনা/অনুভব/বক্তব্য প্রকাশ করে কিন্তু তার এক মাত্র প্রকাশ উপাদান ভাষা। বলা যেতে পারে কবি কাছে আছে, একমাত্র, ভাষাই যা তাকে তার সৃষ্টি প্রকাশে মূল সহায়তা করে। তাই এই অনুভব আর ভাষার ব্যবহার এক কবি কে অন্য কবির থেকে আলাদা করে দেয়। কবি যশোধরা রায়চৌধুরী লেখা পড়তে পড়তে কখনো মনে হয় না এই লেখা অনুভূত হচ্ছে না বা এই ভাষা আমার নয়।  অনুভবের এমন চালনা যা সহজেই পাঠকের অনুভব কে ছুঁয়ে যায়। ভাব আর অনুভবের এক অনন্য মিলন পাই কবির কবিতায়।

গ্রন্থ: পণ্যসংহিতা, পিশাচিনী কাব্য, রেডিওবিতান, চিরন্তন গল্পমালা, আবার প্রথম থেকে পড়ো, মেয়েদের প্রজাতন্ত্র এবং কুরুক্ষেত্র অনলাইন, মেয়েদের কিছু একটা হয়েছে (গল্প) ভারচুয়াল নবীন কিশোর, প্রিয় পঁচিশ,আবার প্রেম থেকে পড়ো, । এছাড়াও রয়েছে ছোটদের জন্যে বুঞ্চিল্যান্ড, গল্পসংকলন, উপন্যাস-ছায়াশরীরিণী। মূল ফরাসী থেকে অনুবাদ করে ফেলেছেন লিওনার্দো দা ভিঞ্চি।

১৯৯৮ সালে পেয়েছেন কৃত্তিবাস পুরষ্কার আবার ২০০৬ সালে বাংলা আকাদেমির অনিতা-সুনীলকুমার বসু পুরষ্কার।

https://www.facebook.com/yashodhara.chaudhuri

লঘু কবিতা -- যশোধরা রায়চৌধুরী


রহস্যময় জলখাবার,   তোমাকে আমি খেতেই পারছি না।

তোমাকে আমি ... তোমাকে আমি, আচ্ছা করে সাপটে নিয়ে তুলে

ঠোঁটের কাছে রাখতে চাই,
          জলখাবার , জল খাবার ভুলে
বিষম খেয়ে মরেছি আমি সেই দিনই তো, যখন তোমার হলাম।

রহস্যময় জলখাবার,  তোমার দিকে যখনই মন দিলাম

তুমি দিয়েছ স্বপ্ন, যাদু, তুমি  দিয়েছ বানানো সব গল্প

নিজেকে তুমি লুকিয়ে রা...

কবিতার কবিতা -- যশোধরা রায়চৌধুরী

শব্দ কী নাছোড়! আমি ফিরে আসতে গিয়ে
ফিরতেই পারিনি। ওই শব্দের ভাসমানতায়
ক্লান্ত হরিণীর মত বেধে যাই। যেন বা শালুক
বেঁধেছে শ্যাওলায়।

শব্দ আমি ভালোবাসি। জীবন আমি ভালোবাসি। আর
কি এক জঘন্য ভালোবাসা নিয়ে বার বার এসেছি, নিজের
অলম্বুশ কাও এক অন্ধকার ভেজা আত্মা নিয়ে

এক হাতে ছিটকে পড়ে ক্ষয়
অন্য হাতে গুছিয়ে গুছিয়ে
রেখেছি নিজের মৃত্যু, ভয়

শব্দ কি প্রত্যুস! আমি এক বিকেল ভালবাসতে গিয়ে
পরিছি সকালে এসে। সে সকাল খুলতে খুলতে যায়
পেঁয়াজের জঘন্য হৃদয়


নিজের কবিকে -- যশোধরা রায়চৌধুরী

এখনো জাগে তোমার মুখ, বাঁকা
সন্দেহের বাতাসে ভরপুর
তোমার মুখে ওই যে হাসি, নাড়িয়ে দেয় সাঁকো
শ্লেষের ছায়া তবে কি মুড়ে রাখছো, না মাদুর?

এখনো জাগে তোমার চোখ, কালো
তীক্ষ্ণ আর উদ্ধত দুই কাঁটা
সুচির মুখে আমাকে তুমি বিধিয়ে দিতে দিতে
বললে, আনো, আমার জন্য, আলো

এখনো জাগে তোমার দোলাচল
আমাকে তুমি বলোনি, ভালোবাসো
চেপেই রাখো তাহলে রাত, ও আর আমি চাই না
ভালোবাসার অপেক্ষায় না হয় হই বেদনাঘন, চুর ...


YASHODHARA RAY CHAUDHURI·SATURDAY, NOVEMBER 7, 2015 (ফেসবুক পেজ)
জলাভূমি থেকে -- যশোধরা রায়চৌধুরী


এক রকমের বদ্ধ উপদ্রুত জলাভূমি থেকে
এই প্রান্তিক পত্র। পাঠালাম তোমার উদ্দেশে।
এই খানে শত শত কবিতার মৃতদেহ ভাসে।
এইখানে রোজ নয়া কাটাছেঁড়া লাশে
রাখা হয় ছুরিকাঁচি। সেলাই হয়েই ফের  তারা
পুনর্জন্মের ভোরে জেগে ওঠে নতুন কবির করতলে।

ফের মরে যায় তারা, ফের কাটাকুটি হয় রোজ
আবার ভরানো হয় ভুশি খড়,  দেওয়া হয় প্রাণরস, এবং তা ছাড়া
ঘেরা হয় অনুপম মন্ত্র দিয়ে, বলা হয়, লেখো লেখো লেখো
আমরা ভূতেরা লিখি, চক্ষুর কোটরভর্তি কান্না নিয়ে, কাঁচা-চামড়াখেকো
কবিতাই। সেই সব মৃত কবিতার থেকে আমরা একটা দুটো পংক্তি তুলে             আনি
কেটেকুটে বসাই অন্য নয়া কবিতায়, পাই করতালি...


Yashodhara Ray Chaudhuri
November 3 · Calcutta · (ফেসবুক পেজ থেকে )

...নিজের কান্নার নুনে নিজের ভাতের গ্রাস গেলো।
নিজের জীবন তুমি নিজের হতাশা দিয়ে ঝেলো।
এখন অলৌকিক আনবে নিজে খাল কেটে, আকাশের দিকে হাত পেতে।
শান্ত সংযত রবে ওহে তুমি অবিশ্বাসী, নশ্বর, হাভাতে!


জনৈক মূর্খের সঙ্গে -- যশোধরা রায়চৌধুরী


জনৈক মূর্খের সঙ্গে বসবাস মনে আনে তীব্র উন্মাদনা
জনৈক মূর্খের সঙ্গে বসবাস আমাকে চালাক করে তোলে
জনৈক মূর্খের সঙ্গে ইতর ভাষায় গালাগালি
মূর্খের বলয়ে আছি। তোলা পাড়া, জিনিশ সমঝানো, সবই মূর্খের মতন।
আমার কথার কেন্দ্রে যে শূন্যতা, যে কেউ পরখ করতে পারো
টোকা দিলে ভেঙে যায়, চট করে ভেবে বলা মূর্খের অপলাপ আহা
এসব মূর্খের সঙ্গে বসবাসে, ক্ষিপ্ত ষাঁড়, আমি ধাই অন্যায়ের অতীত অঞ্চলে
এক মুখ জল ভরে পিচকারি করে ছুঁড়ি পথচারীদের ঘাড়ে ঘাড়ে
সারাদিন সারাদিন বসে থাকি মাছি ওড়া, ঘামাচি চুলকানো ঐ স্নিগ্ধ কলপাড়ে

আপাতত মূর্খ গেছে কাপড় কাচিতে
আপাতত মূর্খ গেছে বকা খেতে, বাথরুমে গন্ধ হয় কেন?
পেচ্ছাপে জল দেয়না মূর্খ ঐ, দ্যাখো দ্যাখো, ঐ যায় বগল চুলকিয়ে
ভাতের থালাটি হাতে, ঐ নেয় পেঁয়াজ লঙ্কা আর এক থাবা নুন।
তরকারি লাগে না ভাতে, ওর লাগে বসে পড়া মাটিতে, থেবড়িয়ে
মূর্খ আপাতত যায় আবর্জনা গুছিয়ে গুছিয়ে
যদি মণিমুক্তা পায় সেই দেখা সেই বুঝে ওঠা
বাকিটা অদ্ভুত হাসি, বাকিটা অদ্ভুত বোকা রোখা
তাকানো মূর্খের। আহা, মূর্খ, মূর্খই পারে, ষাটদিন পর পর
একদিন সারাদিন ঘষে ঘষে পেন্টুল কাচিতে।

মূর্খের বাতায়ন একবার বন্ধ হলে খোলে না সহজে।
বাকি সব চালাক ও সুচতুর, ভাণে থাকে, হাঁ করলেই বোঝা যায় কী বলার ছিল।
আমাদের মূর্খ শুধু নতুন নতুন মিথ্যে, নতুন নতুন ভাট, নতুন নতুন কামাতুর
তাকানো উদ্ভব করে, ম্যাগাজিন খুলে শুধু মেয়েদের নগ্ন ছবি দেখে
পড়ে না, পড়ে না কিছু, অক্ষর জ্ঞানের লোপ। ও শুধুই গোগ্রাসে গেলে
ফুটবল খেলার ছবি। খাবারের ছবি। আর পায়
কী এক আরাম, আর মাদুরে ঘুমায়।
মূর্খের বাতায়ন একবার বন্ধ হলে খোলে না সহজে।
চারিদিকে তালি বাজে, ওইদিক থেকে হুলুধ্বনি ভেসে আসে
মিলিয়েও যায় অন্যদিকে।
মূর্খ আজ সারাদিন মাংসের স্বপ্ন দেখে, মুখ থেকে লালা গড়ালেই
ওর ঘুম ভেঙে যায়, তারপর ও নিজেই যায় আর পুরনো ডলের
চোখ খোলা বন্ধ করা পুতুলের গায়ে বসে মাছি
মূর্খ সারাদিন বলে, আছি আমি, আছি।

দূর -- যশোধরা রায়চৌধুরী

না, শরীর নিয়ে কিছু লিখব না
তুই এলে শুধু খুলে দেব পালানর রাস্তা, কান্না, ভুত ভুত
কাজমাখা নষ্ট মুখ, চোখের উজ্জ্বল কালো বিন্দু খুলে দেব

আমাকে এখনই নিয়ে যাবি? দরজা খুলে দিচ্ছি, ভাই
একা একা ভাল্লাগে না; সাড়িসহ পালাব কী করে
খুলে আসব? খুলে আসছি। পায়ের আলতাও খুলে আসি
আংটায় টাঙিয়ে আসি বাঁকা ভুরু, নাভি ও ব্লাউজ
আর কাদা, টাল টাল কাদা -- তবে স্তনও খুলে আসি

না শরীর নিয়ে আমি তোর সঙ্গে পালাব না; ছলে তুই
যাচ্ছিস কোথায়
বহুদুর দৌড়ে আসি তোর সঙ্গে, পালাব এখন
নাকি তোরও ভয় করছে, কিভাবে শরীর ছেড়ে বাইরে
বেরিয়েছি,
লোকালয়ে?

অগ্রন্থিত কবিতাগুচ্ছ -- যশোধরা রায়চৌধুরী ( কিছু লাইন)


পিঠের উপর দিয়ে হাত চলে গেছে
হাতের উপর দিয়ে চলে গেছে চা বাগান, অনিঃশেষ পিঠ
পাহাড়পল্লব দিয়ে চলে গেছে ঢালু, আঁকাবাঁকা
....
....
...


.

মাত্র এগারোটাই তো বাজে। এতো তাড়াতাড়ি শুতে যাওয়া কেন?
চাঁদ ও চাঁদের পুষ্টির অভাব বলল মেয়েটিকে।
.
.
.

.
.
.

একটা কবিতাই এটা পারে -- যশোধরা রায়চৌধুরী ( কিছু লাইন)

কেন্দ্রে ঢুকে বসে আছে। তারপর কুমন্ত্রণা করে।
এই অসবাভিকতা। হয়ে ওঠা। এই নিষ্করুণ
নিস্তারহীনতা। বর্ম। অবলেপ, চর্মরোগ প্রকৃতির গুণ।

.
.
হালকা শিকড়ে আর লাভাচিহ্ন পাতায় পাতায়


অলৌকিক -- যশোধরা রায়চৌধুরী ( কিছু লাইন)

অলৌকিকের স্বাদ কারা যেন দিয়েছিল কাদের কাদের।
সেই সব ভুলে যাওয়া অলৌকিক, জন্মের আগের, আমরা যাকে
পোঁটলা করে রেখে আসি চিলেকোঠাঘরে।
পুরোনো জিনিস সব, সহজেই ভুলে যাওয়া যাবে।

...

পাঠ -- যশোধরা রায়চৌধুরী ( কিছু লাইন)

আগাপাশতলা যদি তোদের পড়াই হয়ে যায়, মহব্বত করব কাকে ?
এ কেমন দিন দেখালে দীনদয়াল, যেখানে আমি
সবাইকে পড়ে নিতে পারি খোলা বইয়ের মতন,
সবাইকে দেখেই বুঝে নিতে পারি মুখোশের পেছনে খোকলা কত মুখ
এই ফাঁকা অন্তর আর কাটাঘুড়ির মত গোঁত্তা খাওয়া মন
এদের সবাইকে দেখে জানি, একটাই সত্য আশপাশ দিয়ে বুনে চলেছে জীবন
প্রচুর রঙ্গীন উল ও সুতোর ফোঁড়, উল্টা সিধা সব দিয়ে
কার্পেটের চটে চটে , বেরঙিন ধূসর জমিনে ফুল তুলতে তুলতে
ও জীবন, তুমি সুন্দর করবে কর, কিন্তু এত ফাঁকা করলে কেন ?
ভেতরে আরেকটু মাল দিতে পারতে আমাদের।
আমরা ধন্য হতাম ।

আগা পাশতলা পড়া হয়ে গেছে ।
যা ছিল মহব্বত, যা ছিল পিরিত, কলার তুলে বলা, প্রে-এ-এ-ম
তা আসলে আত্মরতি, নিছক শিশুর কান্না, “আমাকে নাও, আমাকে নাও”।

ফাঁকফোকর ভরানো
কষ্ট, কান্না, বেদনাঃ  ভালবাসার আগেই যদি সব পড়তে পারি,
তাহলে এবার নতুন কোন পাঠ পড়াও, জীবন আমার ।

টীকা ও ব্যাখ্যাসহ -- যশোধরা রায়চৌধুরী

বুকের বাঁদিক দিয়ে ব্যথা চলে যায়
লিখি আমি ডানদিকের ফোঁড়াটির কথা
সহজে বলব না আমি সহজে বলিনা
বলিতে পারিনা আমি আত্ম আকুলতা

পেতে পেতে দেওয়া আর দিতে দিতে পাওয়া
না-পাওয়া না-দেওয়া তবু অভ্যাস হল না
তবু আমরা দুঃখকষ্ট-অভ্যস্ত হব না
জীবনের পর্দা দোলে হাওয়ায় হাওয়ায়

এতকিছু গল্প থাকে পরতে পরতে
প্রতিটি গল্পের মধ্যে বাঁদিক ডানদিক
সহজে মনের কথা বলিতে পারিনা
ডানদিকে বেদনা হলে চেপেছি বাঁদিক

পেরেছি সূক্ষ্ম ব্যথা বোঝাতে নিজের
এভাবেই, হৃদয়েও শুকনো ও ভিজের
অনুভবে রগড়াই নাক কিম্বা কান
এভাবেই বুঝে নিতে হবে এ ব্যাখ্যান

নিজের দুর্বল দিক তোমাকে দেখাব
তার আগে নিজেকে তো দেখতে হবে, নাকি?
আমার সমস্ত ব্যথা আমি নিজে নিজে
অনুবাদ করি ভুল ভাষায়, পোশাকি...

এক মসালা, মালাই মারকে... -- যশোধরা রায়চৌধুরী

আম্বালা ক্যান্টনমেন্টে বৃষ্টি নামে। বরফ শীতল।
ওইদিকে কম্বলের ঘোর থেকে বেরিয়েছে ঘুম ঘুম চোখ।
চা নিয়ে এসেছে কেউ? ঠুংঠাং গেলাসের গান
শুনব বলে উৎকর্ণ। এলে বোলো -
ঘন মেঘে রোদ্দুর আবার হারাল
বাকি পথ এমনই কুটিল।

কবে আর আসিবে সে? চা আমার, চাওয়াপাওয়া সব?

চড়া এলাচের গন্ধ। মিষ্টি , আঠালো?
মালাই প্রগাঢ় মারো, মসালা জীবনে এনে ঢালো
মাশা আল্লা, সাধে কি গো চেয়ে থাকি গোটা পথ? এসো পানিপাঁড়ে,
আপাতত জলই খাই... উলে মোড়া জলের ক্যান্টিনে
দুমড়োনো টিনের পাতে টোল বসিয়েছে রেলগাড়ি
ঝনঝন দুলুনিতে একা দোলে আংটায় টানানো।

এইবার আসিয়াছে। পুরুষ, প্রকৃতি মিলে গেল।
ওগো চায়ে, ওগো রতি, এইবার অন্ধকার ঘুমে
ছ্যঁ¡কা দাও উষ্ণতম। বাদামি তরল, নেমে এসো!

মেমোরিজ অব আন্ডার ডেভেলাপমেন্ট -- যশোধরা রায়চৌধুরী

উঠোনের গল্প খালি মনে পড়ে যায়।
আমপাতা ছড়িয়ে আছে। ঝাঁট দিতে দিতে
সারাদিন কেটে যায়, সোঁদা, মৃদু ঝাঁট।
ছাতের আলিসা ধরে আচার, করুণ ব্যবহার...
ছেঁড়া গেঞ্জি, হিশিগন্ধ, ময়লা, ঘরপোঁছা
তাও পাশে মেলে দেওয়া। ছোট বাচ্চাদের
ছেঁড়া জুতো। চৌবাচ্চাভরা
শুকনো পাতার সঙ্গে গত বর্ষা জলের সবুজপানা রেশ
'মশা হবে', 'মশা হবে' আমাকে বলে কী হবে? যাও
ছড়াও নুনের মতো সাদা, গুঁড়ো গুঁড়ো
ব্লিচিং পাউডার : ক্ষমা করো, এই বাড়ি সামলাতেই আমি শেষ...
ম্যাক্সি উঠিয়ে বাঁধি, কপালের ঝুঁকে আসা চুলে
দুটি-তিনটি সাদা পাই : রাগ করো তুমিও, কোমরে টেনে পরা
আধালুঙ্গি : কর্মী, যেন মোড়লের মতো মনে হয়
ঝগড়া করি গৃহকর্তা, গৃহকর্ত্রী, বকম বকম, খুব সুখী
পঞ্চায়েত, ভিটেমাটি... উঠে আসছে ভিজে ভিজে গন্ধ,
                         সোনামুখী...

তবু -- যশোধরা রায়চৌধুরী

১.

কে এখন জানাবে যে ভালোবাসা কি রকম হয়
জানার বিশেষ কোনো ইচ্ছে নেই আমারও, এখন
তবু এই পাত্র ছুঁয়ে থাকা আর জলাধারপার্শ্বে বসে থাকা

২.

ভ্যাজর ভ্যাজর করে কর্ণমূল খেয়ে ফেলেছিলি
এখন তৃষ্ণার্ত, তুই কানে দিস পরম মূর্খতা।

দুটোই সমান, কিচ্ছু ফল নেই, জেনে তবু তাতে মজে থাকা
তোর উপর রেগে যাচ্ছি খুব
তবু কেন মনে হয় তৃষ্ণাকালে ঠোঁটে তুই জল ঢেলে দিবি,
ঠিক সময়ে ?  

আলমারি খালি করার পর -- যশোধরা রায়চৌধুরী (কিছু লাইন)

তোমার শৈশবের ক্রিয়াক্ষেত্র
কৈশোরের অবনত ব্রীড়াভঙ্গিমা
যৌবনের উপবন
উঠন্তি বয়সের খতরনাক মোহ
এই আলমারি।

সাড়িগুলি চলে গেছে; রেখে গেছে মৃদু নাভিশ্বাস।
.
.
.
জেনেছি যে এই হল বেঁচে থাকা।
শাড়ির পারের মৃদু ঝুলে থাকা, রডে।
পালিশের দাগে দাগে অ্যাসিড ছোপের মত স্লান মনখারাপ।

তথ্যসুত্রঃ ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইট, কবির লেখা বই, বিভিন্ন পত্র পত্রিকা।