🍁
বিবাহ— প্রজ্জ্বলিত অগ্নির সামনে দাঁড়িয়ে শপথ, অঙ্গীকার! অগ্নিকে সাক্ষী রেখে বর-কে সাতপাকে বেঁধে স্বামীত্বে বরণ। তারপর মায়ের সারাজীবনের ঋণশোধের কনকাঞ্জলি পেরিয়ে মেয়ে চলে যায় শ্বশুরালয়ে। কোনোরকমে দায় সেরে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে কন্যাদায়গ্রস্ত অভাবী পিতা। খরবৈশাখের দুপুরের আগুনবাতাসে ঝলসে যাচ্ছে কনের চাঁদপানা মুখ। তাকিয়ে আছে বরের মুখের দিকে করুণ চোখে, আর একটা নিষ্পাপ কাতর মুখ। হয়তো স্বামীর মুখমণ্ডলে ঠিকানা খুঁজে চলেছে সে। পরম বিশ্বাসের একটা নতুন ঠিকানা! নিজের আজন্মের ভিটেমাটিতে পিতামাতার স্নেহের পরশে লালিত পালিত হওয়া একটা অসহায় প্রাণ, অনিশ্চয়তার রুক্ষ কঠিন মরুপ্রান্তরে তার নতুন ঠিকানা খুঁজে চলেছে,.. মরীচিকার মতো এক অলীক সুখের বাসনায়। কেন ঝাঁপ দেয় সে গোধূলি লগ্নে, কোন সে অজানা আনন্দের বাদ্যিবাজনার স্বপ্নচূড়া থেকে? কে জানে! হয়তো সবই ব্যর্থ পরিহাস! ততক্ষণে বিয়ের সানাই, তালবাদ্যি, নহবতের সুর, আত্মীয় পরিজনের হৈচৈ, সব হারিয়ে গেছে মঞ্চশূন্য হাহাকারের মতো!
বাক্যহীন ক্ষণগুলি বড় বেশি কথা বলে আজ—
পথিমধ্যে অকূলপাথারে পথনির্দেশ পায় না দুচোখ।
কনেবউ নারী ঠিকানা খুঁজে মরে— দিনরাত, রাতদিন,.. কখনো আলোয়, কখনো অন্ধকারে…
আসলে, নারীর কোনো দেশ নেই।
অথচ, তার বুকে পিঠে জঙ্ঘায় নাভিতে চিবুকে গালে ললাটে কত না দেশ…
শুধু তার চোখে নেই কোনো দৃশ্যমান স্বদেশ।
কেন নেই? কে না জানে— যত প্রশ্ন, ততই গণ্ডগোল!
তার কালো মেঘের এই দুরূহ জটিল জ্যামিতিক উপপাদ্য ঘাঁটে না কেউ..
তবু কতিপয় মানুষের মস্তিষ্কের চেতনাপ্রসূত প্রশ্নগুলো মাঝে মাঝে নড়ে চড়ে ওঠে। তখন উন্মাদ কিছু লোক সেইসব বিক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলোকে একত্রে জড়ো করে একটা প্রাগৈতিহাসিক হামানদিস্তায় থেঁতলে দিয়ে যায়..
পৃথিবীর নীল মানচিত্রে আজও নারীর স্বদেশের কোনো অস্তিত্ব নেই…!
🍁
টালিগঞ্জ, কোলকাতা।
রচনাকাল > ১৬|০৫|২০২৩