সুন্দরবনের কাছে পিলখানার জঙ্গলে  - নদীটার
  গা ঘেঁসে হতদরিদ্রদের বসতি , সারিসারি -
       কুঁড়েঘরগুলি  বন্যায় বানভসি হয়   প্রতিবারয়ি ।
                              
এখানে দারীদ্রতার সাথে মৃত্যুভয় ,বাঁচে ওরা  ক্ষুধার  হাহাকারে
অরণ্যে-  জীবনেরে  খোঁজে  -  জীবিতর বাঁচার অধিকারে ;
বিধবা মায়ের বাঁচার লড়াই -  সাথে লয়ে কিশোরী কন্যারে ।

জীবিকা ওদের  পাতা কুড়ানো –শাক বা বুন ওল বা অন্য কিছু
   জলেতে গেঁড়ি গুগলি-কোন দিন হয়তোবা কাঁকড়া জোটে -         মৃত্যু রোজ করে  তাড়া -তবু ছোটে ওড়া ,  
                                   জীবিতর আশা ছোটে-
                  বন্য জীবীকার পিছুপিছু ।
  খুকু একাই   গেছে বনে  -রোজ যেমনটি  যায়  
অসুস্থ  মা আঁধারে অন্ধকারে- অপেক্ষায় ।

         দিনের শেষে গোধুলির  ক্লান্তি নামে  পাখীদের নীড়ে  ,
একে একে সবাই  এল ফিরে –
         বিহ্বল উপোসী   মা অপেক্ষায় দুয়ারে-
              শুধায় সবারে  ‘ কোথায় ফেলে এলি  খুকুরে  ?
             হতভাগী ফিরলোনা – ঘরে ?’
বস্তীর কোলাহলে  নিঝুম অন্ধকারে
   অবশেষে দুঃসংবাদ আসে -  জননীর উন্মাদ চিৎকারে
    বনবিবির অভিশপ্ত থাবায়  রক্তাত্ত খুকুরে-
          বন্য হিংস্রতার শিকরে –
                  ক্ষুধার্ত অসহায় ছোট্ট মেয়েটিরে  ।
   নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাসে  
আতংক ঘনায় বস্তীর দূষিত  বাতাসে  ।
সব   মরদেরা ফিরে এল মাঝ রাতে
              খুকু  শুধু শেষ নিয়তির আদেশে
                       বন-বিবির রক্ত পিপাসাতে ;

   বন্য জীবনে পশুদের কত  হত্যালীলা চলে-
চোরা শিকারে ,বাঘিনীর ক্ষুধার্ত সংসারে -  
খাদ্য হোয়ে-খুকুমণি চলে গেল  মানবী মায়ের কোলখালি করে
         প্রাণ দিল  পৈচাসিক উল্লাসে-
                    বাঘিনী মায়ের   রক্তাক্ত নখের আঁচড়ে !
   হায় মানুষের সভ্যতা - কন্যাশোকে  উন্মাদিনী মাতা ,
                       সমাজের বিধানে সে অবহেলিত -লাঞ্ছিতা ;



   অশুভ কুসংস্কারের  কুমন্ত্রণায়
’গভীর অরণ্যের আধো অন্ধকারে  ,
      কলঙ্কিনী –বিতারিত জননীর
                      ঠাই নাই তার বস্তীর কুঁড়েঘরে ,
,- কন্যাশোকে পাগলিনী মায়ের   উন্মাদ আর্তনাদে–
             বনে বনে খুঁজে  বেড়ায় সন্তানেরে ।


অশিক্ষা কুসংস্কারে আচ্ছন্ন  সালিসীর বিধানে
              অভিশপ্ত   ‘ডাইনী’ অপবাদে -
সমাজের  ঘৃণিত  অভিশাপে-
অসহায় আর্তনাদে -
    নিষ্পাপ শোকার্ত  প্রতীবাদে -
        ' জননী অরণ্যে- আজও  কাঁদে ! '