মল্লারের - মেঘ কক্ষনো থাকে না ইমনে ,
সৌম্যদর্শন এক পৌড় –তৃপ্ত এতক্ষনে-
থমকে দাঁড়ায় ১২/১ , সেন্ট্রাল রোড, যাদবপুর এর
গেটের সামনে ।
বৃদ্ধ - পাসের কলিং বেলটি টেপেন -
বলেন “ এখানে অনুরাধা কী থাকেন ? ”
রোদটা আজ খুব চড়া- গুমট ভাবটা চেপে ধোরেছে ,
বছর পচিসের এক যুবক এলো, ক্লান্ত বৃদ্ধর কাছে ;
বলে বৃদ্ধরে “ চিনলাম না তো আপনাকে ,”
“আমি দীপঙ্কর আইচ” ঘর্মাক্ত বৃদ্ধ বলে তাকে-
“ আদিবারি কাটোয়ার- শক্তিনগর গ্রামে ,
অনুরাধা ঠিক চিনবে আমাকে ;”
গেট খুলে যুবা বলে “ আপনি চেনেন আমার মা কে –
ওখানাই তো বড় হোয়েছে মা - বহুবার বোলেছে আমাকে ।”
বৃদ্ধ বলে “ মল্লার দেবুদাদা এসেছে-বলো গিয়ে মা কে ,
বহুযুগ আগে- ঠিকানাটা পাই অনুর চিঠি থেকে।”।
বৃদ্ধরে প্রণাম করে অপরূপা এক যুবতী দাঁড়ায় এসে পাশে-
ডাইনিং টেবিলে ফল , মিস্টি ও জল ঢাকা ছিল গ্লাসে ;
যুবতী বলে “ মামাবাবু ডাকটাই-
বোধহয় মানাবে আপনাকে-
আমি অর্কর স্ত্রী - অর্পিতা -বছর পাচেক হল এসেছি এ বাড়ি-
একটু বিশ্রাম করে দেখে আসুন শাশুড়ি মাকে ,”
“ তোমার বাবাকে –” বৃদ্ধ বলেন
“ এখানেই ডাকোনা অনুকে ।”
দেয়ালে ছবিটি দেখিয়ে অর্ক বলে-
“ বাবা পনের বছর আগে গেছেন চলে
ছোট বোনটাও- ঠিক সাত মাস পরে ,
চোলেগেল ভাসিয়ে মায়েরে ;
সেই থেকে মা আমার বাকরূদ্ধা, প্রতাশাহীনা- অতল পাথারে ।
শয্যাশায়ী সাড়াটি বছর- চেয়ে থাকে অপলকে ,
নীচে নেমে আসে – শুধু একটি দিন –
মায়ের জন্মদিনে- আজকে ।
”
বুকে টেনে নিয়ে বৃদ্ধ বলেন অর্ককে -
“ আজ ১৯শে বৈশাখে-
চল দেখে আসি অনুরাধাকে । ”
পুরনো একখানা চিঠি –
পাঞ্জাবীর বুকপকেট থেকে দিয়ে অর্ক কে ,
বৃদ্ধ দেখেন তার অনুরাধাকে ।
কান্নাভেজা অপরাহ্ণের আধো অন্ধকারে
অনুরাধার নিথর দৃষ্টি-চিনিল না বৃদ্ধরে ;’
অর্পিতা , পুরোন চিঠিটার কিছুটা শোনালো অর্ককে-
“ দীপুদা ,
না বলেই পালিয়ে গেলে – চিন্তার মেঘ মল্লার শুধু মননে ,
তোমার বেহালায় ‘মল্লার’ শোনা হল না এ জীবনে ,
শ্রাবণের বৃষ্টিতে ভেজা হল না আমার-
একুশেই আটকে বেহালার ছড়টা ‘ইমনে । ---’
অর্ক র চোখে অশ্রুধারা-বহে উচ্ছাসে
বিধাতা বৃদ্ধ শিল্পীরে পাঠিয়েছে কেন আজ পাসে-
“ বোধ হয় বাজাতে ‘ মল্লার’ –অনু আজ পঞ্চাশে ।
বৃদ্ধের চোখ ছলছল, ভাবেন - যা ঘটবার
তা তো ঘটেই গেছে- আজ বাজাবেন তাই মল্লার ।
পরম যত্নে সুরবাধেন সুনিপুণ হাতে ,
অনুরাধার সেই পুরনো বেহালাতে ।
ছড় টানতেই –মল্লারের মুর্ছনায়
যেন মেঘের ঘনঘটায় বিদ্যুৎ চমকায়
অনুরাধা নীচে নেমে এসে- দারিয়ে দরজায় ;
এই বিকেলটাই পঞ্চাশ বছর ছিল অপেক্ষায় ।
তন্ময় বৃদ্ধ দীপঙ্কর ছড় টেনে যায়-রাগ অনুরাগ সৃষ্টিতে ,
অনুরাধা চেয়ে থাকে সেদিকে -অপলক দৃষ্টিতে ,
মল্লার ঘরজুড়ে তখন মুর্ছনায় অঝোর বৃষ্টিতে !
“