একটা ঘেন্না-
কিছুতেই পিছু ছাড়ে না ,
হারিয়েছে হাহাকারে – আজো খুঁজি তারে-
বুকে শুনি শুধু তার কান্না ।
স্বাতীলেখা আমি , যুবতী ও একা -
একাই সংসার চালাই ,
বাড়িতে শয্যাশায়ী চিররূগ্না মাকে একা রেখে
ট্রেন-বাস কোরে অফিস যাই ।
দশটা- পাচটার চাকরী –
এটা ছিলো আমাদের ভীষণ জরুরি ,
ট্রেনে বাসে নারীত্বের অবমাননা সহ্য করি ,
হজম করি রাস্তার মোরের অশ্লীল টিটকারি,
রাত সাড়ে সাতটায় রোজ বাড়ি ফিরি ।
কিছুকিছু প্রতিবাদ – ঝুড়ি ভড়া অপবাদ
পঁচা গলা সমাজে আমি –
শাড়ির আব্রুতে ঢাকা এক নারী ,
মানতে বাধ্য হোয়েও মনে প্রাণে ঘেন্না করি ।
ঘরেতে মা অসহায়- থাকে আমার অপেক্ষাতে-
দরজা খুলতেই ভেঙে পরি ঘেন্নামাখা ক্লান্তিতে ,
মা ও বিছানা মাখামাখি বমি তে-
পেচ্ছাপ - পাতলা পায়খানাতে ।
পোশাক বোদলেই-
ঝাড়ু বালতি ফিনাইল দিয়ে ঘেন্না সাফাই ,
স্নান সেরে মাকে খাওয়াই ;
সাড়ে দশ বেজে যায় রাতে শুতে-
আমি যে কন্যা - তাই
চোখ- মুখ বুজে থাকি ঘেন্নাতে ।
এক কামড়ার ঘরে মা আর আমি
দুটি খাট পাতা আশপাশ ,
এতেই ভাড়া আটশো পঞ্চাশ,
আমার ঘেন্নার রোজনামচা ছিল এরকম বারোমাস ।
আজও মনে পড়ে, অফিসে লাঞ্চ ব্রেকে বান্ধবী শীলু এসে
টিফিন বক্সটা দিয়ে যায় ভালোবেসে ,
আমার জন্মদিন, টিফিনে শুভেচ্ছা তাই পায়েসে ।
একটু মুখে দিতেই ,
সকালের ঘেন্নাটা নাকে মুখে আসে ,
গা গুলোয়- দুটিচোখ কান্নায় ভাসে ।
মাকে স্নান করিয়ে,
খাবার ও ওষুধ খাওয়ানো-শোয়ান
শেষ করি সকাল আটটাতে ,
নিজে তৈরী হয়ে খেতে বসা- পাশেই মেঝেতে,
সেদিন- তখনি মা ছ্যেড়ছ্যেড়িয়ে
বিছানা ভাসালো পায়খানাতে ;
খাবারটা ঢাকা, সেদিন পারিনি খেতে , ঘেন্নাতে ।
বিছানা ও মাকে পরিষ্কার করি আবার ,
সাবান, ফিনাইল-ডেটল ও পাউডার-
রোজকার মত ঘেন্নাটা গলাথেকে বেরোতে চায় বারবার,
খাওয়া হল না আর ।
টুকরো টুকরো ঘেন্নাগুলো মনে গেঁথে থাকে,
আঙুলের ডগায় নখের ফাঁকে ফাঁকে ।
মাকে সেদিন রাগে অভিমানে বকাবকি করি ,
বলে আসি “ হয় তুমি – নয়তো এবার আমিই মরি । ”
বান্ধবীকে বলিনি সেদিন-
নখের ভেতরে জানান দিচ্ছিলো ঘেন্নারকুচি ,
জন্মদিনের পায়েস বাড়ি গিয়ে মাকে নিয়ে খাবো বলি-
তাই খাওয়ায় অরুচি ।
সেদিনই শেষ রাতে –
মা আমার চলে গেলেন- মুক্তির আশাতে ,
অসহায় কন্যার জ্বালা বুকে নিয়ে ঘেন্নাতে ;
একটা ঘেন্না ছিলোতো পাশে আমার দুটি হাতে ,
খুজলেও পাই না ওকে আজ – আঙুলের ডগাতে ।
করবো না তাই ক্ষমা –নিজেকে, ঘেন্নাতে !