" ধ্রুব ... ধ্রুব  না ? "  ,চমকে গেলাম,
           এ ডাক তো শুনিনি বহুকাল- আমি
বলি " তুমি কি...তুমিই " ?
" হ্যাঁ , নিশিকান্ত শুড় - ছোটবেলার  নিশু !"
তড়িঘড়ি করি জড়াজড়ি- মাথা ঠোকাঠুকি,
              মনে  মাখামাখি
                 বাক রুদ্ধ-দুই বৃদ্ধ,
        খেলার পুতুলটিরে
                যেন  ফিরে পেল-
                    বিকেলের বুড়োশিশু ;
                       দুটি হৃদয় আপ্লুত হল -ধ্রুবনিশু  !
ছিলাম ওর আমি  শৈশবের সাথী , ও ছিল বেশ জওয়ান -
                সেই শুরু ইসকুলেতে ,
                                 আমরা ক্লাস ওয়ান !
     সদাই ছিলাম কাছাকাছি -
                   যেন  আঁঠির সঙ্গে মাছি ,
                    আমি কপাল        ও ঘামাচি ,
          বিকেলবেলায় ভোরের হাওয়ায়-
                      হৃদয় ওঠে নাচি !
   কোথায় গেল -সেই চেহারা ,
               বেশভূষা সেই ছন্নছাড়া ,
                       লাগছে ওকে অনেক রোগা ,
                       তবুও  ভংকর সেই  ভালোলাগা !
" কেমন আছো নিশিকান্ত ? "
                       বলে " বন্ধু -আমি বড় ক্লান্ত ! "
সত্তরের সেই  বিকেলে ,
                         হয়েছিল ছাড়াছাড়ি,
               উচ্চশিক্ষার হাতছানিতে,
                   দিয়েছিলাম বিদেশ এ পাড়ি ;
                    সে  এক আগুনে সময়
                     স্লোগান ' নকশালবারি - নকশালবারি   '' !
      নিশিকান্ত , ইউনিভার্সিটির সেরা ছাত্র ,
                       অনার্স বি এ ( পল ) ,
                   চোখে মুখে  বিপ্লবের বজ্র হুঙ্কার-
         ' ক্ষমতার  উৎস-  বন্দুকের নল ' !
       এতদিন পরেও বন্ধু  -
                সেই বিপ্লবী বিশ্বাসে   অটল !                    
" বন্ধু  এখনও কি স্বপ্ন দেখো ? "
               ওর চোখের কোনে  জল !

  বলে ' থাক না সে সব,
              এসব ঘটে ! "

          অনেকটা পথ হেঁটে হেঁটে-
              পৌছে গেলাম কাঁঠালপাড়ার মাঠে ,
           চারিদিকে শুধুই আধার,
                 আলো  জ্বলছিল-
                               তখন পাশের  হাঁটে !

           সবুজ ঘাসে বন্ধু পাশে-
                  কত স্মৃতি  আকাশে- বাতাসে,
    কত কথা    কত ব্যাথা,
                           বন্ধু  কেবল হাসে ,
                   দুজনে   আকাশটাকেই  দেখি-
                                      পাশাপাশি শুয়ে ঘাসে  !
  বলি " নিশিকান্ত , দেখ  কি আজো  আকাশের তারা ? "
   " চাঁদ তোমাদের ক্যাপিটালিস্ট-" বললে নিশু
                          " আমার তারারা সর্বহারা ! "
বলি  ' আমরা যদিও -বুড়ো হোয়েছি,
       মেজাজটা  আগের মতই
                                  যৌবনেতেই বেঁধে রেখেছি ! "
অনেক কিছু  শোনা হোল না,
                 বলি " শরীর কেমন নিশু ? "
বলে ও  ' রাতে তো  ঘুম হয় না ,
                            বার বার পায় হিশু ;
                খাওয়ার ইচ্ছেটা একদম নেই পেটের গোলযোগে ,
           বুকের খাঁচার দখল নিয়েছে রাজকীয় মরণ রোগে !
                      এখনও আমি স্বপ্ন দেখি ,
                             চড়ুই হোয়ে ধাওয়া করি ,
                           ঠোঁটে ধরে স্বপনেরে
                             মনের খাঁচায় বন্ধ করি ! '
শুনে আমি বাক রুদ্ধ, চোখ ভরে এল জলে ,
          " বন্ধু তুমি ,  যেওনা আমায় ফেলে ! "
বন্ধু বলে ' বোকা ছেলে, সেই আগের মতই আছিস ,
         মৃত্যু তো ধ্রুবসত্য ,  কেন কাঁদিস ?
ওষুধ   ঠেসে  জীবনযাপন ,
          সুখের লোভে নিশি জাগরণ
        চাইনা হোতে ক্যাঁতরানো এক শতায়ুর বিজ্ঞাপন !
              অনেক দিয়েছ জীবন আমায় ,
                 মৃত্যু  চাই ,  সেটা যেন পাই -
                              এটাই আমার     বিপ্লবী প্রত্যাশা ,
                বন্ধু তুমি নিয়ে  যাও সাথে জীবনের ভালবাসা !!
---------------------------------------------

নিশিকান্ত বছর খানেক বেচে ছিল ,
     সুনীল ভক্ত বন্ধু আমার-
             ' নিশ্চিন্তপুর ' পাড়ি দিল !!