চোখ বুজে আসে কিন্তু ঘুমের জন্য হৃদয় জেগে আছে
হৃদয়ের বিপরীতে চোখ কথা বলে
মন সায় দেয় না
হৃদয় কথা বলে রাতের ভাষায়।
ঐ সুদূরে শোনা যায় সমুদ্রের নিয়মের কথা,
সময়ে কথা;
সমুদ্র বিস্তৃত জলরাশি নিজেকে স্বমহিমায়
উজাড় করে রেখেছে আপন সত্তায়
শোনা যায় যা ভেসে আসছে তার কথা ও সুরের ছন্দমালা;
আমার হৃদয় কী ঘুমোবে এখন?
সে যে সজাগ!
ঠিক এরকম দৃশ্যের শব্দ শুনেছি কন্যাকুমারীতে,
মারিনা বীচে; আরো একবার শীতের রাতে রামেশ্বরমের সমুদ্রতীরে;

এখানে চোখ বুজে আসে সমুদ্রের সুমধুর দূরাগত বাতাসের ঝাপটায়,
মাছের সামান্য আঁশটে গন্ধ ভেসে আসছে উৎরোল সমুদ্রের মিশ্র শব্দে;
আকাশের নক্ষত্রমালা সমুদ্রের উপর কী দারুণ,
কী অপূর্ব ঝিক্‌মিক্‌ করছে;
তাদের আধো আলোয় সমুদ্রের ঢেউয়েরা খেলা করছে;
আমি সেই সব দৃশ্য আজ এই শীতের শেষে
পোর্ট ব্লেয়ারের সমুদ্রতীরে উপভোগ করছি।
এখানে দেড়শ ফুট পাইপের উপরে জাতীয় পতাকা,
ভারতবর্ষের প্রতীক চিহ্নে দাঁড়িয়ে আছে;
তখন কী মনে পড়বে আমাকে ঘিরে আছে জলরাশি?
আমারও ইচ্ছে হয় জলের মধ্যে যেন অদূরেই ভেসে থাকা
রস দ্বীপে উঠে পরি একবার;
তার আস্বাদ পাবার জন্য;

এ যেন এক অন্য পৃথিবী যদিও মানুষের আদল,
ভাষা, খাদ্য, বেশভূষা একই
তবুও প্রকৃতির ভাষা রূপ রস গন্ধ সব অন্যরকম
হাজার হাজার কিলোমিটার দূরের স্থল ভূমি থেকে
আমিও যেন অন্য এক দ্বীপে প্রকৃতিস্থ;
এখানে সূর্য দ্রুত উঠে যায়;
আলোর পরশ পাওয়া যায় অন্য অনেকের থেকে অনেক আগে;
তখন অনেকেই নিদ্রাচ্ছন্ন।
ঘুমঘোরে অথচ প্রাণের স্পন্দন খেলা করে
অগণন আলোর জ্যোতির্ময়ী রূপ নিয়ে আসে সকালের সূর্য
সমুদ্রের উপর থেকে বাতাসের সাথে ঢেউয়ের সাথে
অন্য দ্বীপের রূপ রস গন্ধ জীবনের স্বাদ মিশে আছে সেই বাতাসের সাথে

মনে হয় অতীতের সব অবসাদ,
সব মৃত জীবনের কথা,
বিঘ্নিত সময়ের কথা;
স্বাদহীন বিবর্ণ জীবনের ব্যস্ততার কাহিনী,
যদি এইরাতে এইখানে একবার শুধু মাত্র একবার
ভিড় করে প্রাণভরে এ জীবনের অমৃত পান করে যেত সকলে
তাহলে ইচ্ছে, অনিচ্ছা,
জীবনের সফলতা বলে কিছু থাকত তাদের;
তাহলে ধর্ম জাতি ভাষার হিংসা-বিদ্বেষ অবলুপ্তপ্রায় হতো;

এখানে মিশে আছে সেই সব ব্যাক্তির নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস
যারা তাদের মূল্যবান প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিল অন্যদের প্রাণের কথা ভেবে;
আজকের অদম্য চিন্তা চেতনাকে স্মরণ করে কিভাবে হৃদয় ঘুমোবে আজ?
যদিও চোখে ক্লান্তি অবসাদ ভেসে আছে সারিবদ্ধ গাছেদের ধ্বনির সাথে।