আমার স্বপ্নে আমার বাল্যবস্থা
আমার বিছানায় বাল্যবস্থা
আমার বাথরুমে বাল্যবস্থা
আমার খাবার টেবিলে বাল্যবস্থা
আমার সাথে আমার প্রিয় বেড়ালের মতো
ছায়ার মতো আমাকে জড়িয়ে আছে ।
যত দিন আমি বেঁচে থাকবো
ঘুরবো ফিরবো তোমার মুখমন্ডলে তোমার মৌন চোখে
গাছে রাস্তায় মাঠে পুকুরে ঘাটে
তাকে উলঙ্গ উৎফুল্ল বিবর্ণ দ্যাখা যায় ।
কখনও স্বপ্নে ছুটো-ছুটি করি যথাস্থানে ফিরে যাই
গাছেদের স্পর্শ করি কাঁঠালের গন্ধ শুঁকি
তার ঘ্রাণ এখনও নাসারন্ধ্রে।
পুকুর পারে ছিপ-হাতে মৎস্য শিকার
অন্য হাতে ডাঙা থেকে শিকারী বাঘের মতো একলাফে জলে।
জলের কাঁকড়া আমার হাতে
মুঠো চেপে ছুট দিই ঘরের পিছনে
তাকে মাটির পাতিলে রেখে ফের ছুট
পাতিলে কাঁকড়া-পুঁটিতে কোলাকুলি ।
আমার স্বপ্ন ভাঙ্গে স্বপ্নকে প্রেমিকার মতো
দুবাহুতে আলিঙ্গনে সোহাগে লিপ্ত থাকি
সে যেন অভিমানে না পালায় যেন না পালায়
যদিও পালিয়ে যায় আমিও তার পশ্চাত-এ ধাবমান
তাকে গিয়ে ধরি সেই যথাস্থানে ।
আজ চল্লিশটা বসন্ত পরে আমি এইখানে দাঁড়িয়ে
আমি এর কোনোটাই দেখি নি
কী কী ঘটে গেল কে বা কোন পাখির দল
নতুন গাছ নতুন পাতা গাছেদের-নৃত্য পাখিদের-নৃত্য
তাদের গুঞ্জন সব আমার কাছে নতুন
আমি যে তাদের কাছে এক আগন্তুক
পরিচিত রূপ রস গন্ধ সব উবে গেছে ।
এখন এখানে সব সোজা
বক্র পথেরা উধাও
কোথাও একটু বেঁকে ফের সোজা পথ গিয়ে উঠেছে
ঠিক কোননা কোন দালানে
সে-ই একমাত্র জানে কটা বসন্ত আমার জন্য অপেক্ষায় ছিল
অথচ আমি দূর থেকে কখনো দিল্লি কখনো কোলকাতায়
তাদেরকে খুঁজে বেড়িয়েছি ।
জলা জমির উপরে জলা-রাস্তা সব মুছে গিয়ে
তার ওপর বাড়ী বাড়ীর ওপর বারান্দা
সেই বারান্দায় শীত গ্রীষ্ম বসন্ত।
আমার আকাঙ্ক্ষিত চোখ না পাওয়ার বেদনায়
বিরহী প্রেমিকের যন্ত্রণায় কাতর
আমার শরীর বেয়ে বজ্রপাত যেন মাটিতে নেবে গেল
আমি যেন শঙ্কায় থরথর করে কাঁপতে থাকি
মুহূর্তেই আমার বাল্যকালের মৃত্যু ঘটে গেল ।
আমার বয়স বেড়ে যায় যতদূর চোখ যায়
সমস্ত দৃশ্যেরও যেন একধাপে বয়স বেড়ে গেল
ক্ষণিকের মধ্যে আমার একটা জন্মের মৃত্যু ঘটে যায় ।
*****