কে বলে যে চলে যায় পৃথিবীর মায়া ছেড়ে আর ফিরে আসে না কোনদিন,
কেউ চলে গেলে জগতের মায়া-মমতা বাদ-বিবাদ ভালো-মন্দ
সমস্ত পড়ে থাকে এই পৃথিবীতে,
সকলের জন্য নয়
প্রিয় থেকে প্রিয়তর যারা তাঁদের জন্য।
আমার পিতা ইহলোক ছেড়ে পরলোকগমন করেছেন আট বছর আগে,
তাঁর সাধের গ্রন্থগুলো তাঁর শাস্ত্রীয় ভাষণ সব রেখে গেছেন আমাদের জন্য,
সেদিন আমাদের পাঁজরের সব রিবসগুলো ওঠানামা করছিল কামারের উষ্ণ হাপরের মত,
শেষবারের মতো সশরীরে যেদিন চিরকালের মতো ঘুমিয়ে থাকতে দেখলাম
আর জাগবেন না কোনদিন একথা-সেকথা ভেবে ভেবে।
শেষ শয্যা যে চারপায়ায় নিয়েছিলেন
সেই স্থানটা ছিল পিতার সবচেয়ে প্রিয় অধ্যবসায়ের স্থান,
ঘরে ঢুকেই চারপায়া দেখলেই মনে হয় এখনও তিনি আছেন,
হয়তো বাইরে বেরিয়েছেন প্রাত্যহিক ভোরের কিংবা গোধূলীর হাওয়ায় মনটা ঈষৎ হালকা করে নিতে।
আজও চারপায়া জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসা কিংবা এদিক-ওদিক ঘিরে শোয়া হয়নি তাতে,
খালি মনে হয় তিনি বসে আছেন নতুবা শুয়ে বিশ্রাম করছেন,
সমস্ত শাস্ত্রীয় ধর্মগ্রন্থগুলো যথাস্থানে আছে,
মনে মনে ভাবি সেগুলো সরানো ঠিক হবে না
যদি ফিরে এসেই ঠাস করে কষে একটা চড় লাগায়
কারণ আমারও ভীষণ রাগ হয় যদি আমার কবিতার বইগুলো কেউ অগোছালো করে রাখে।
সময় পেলেই বই খুলে বসে পড়ি ঠিক যেমনটি পিতা করতেন,
সব কিছুতেই তাঁকে আমি খুঁজে পাই অথচ চার ভাই মিলে আমরা কাঁধে করে শ্মশানে গিয়েছিলাম,
জোরালো শব্দ যখন চিতা থেকে ছড়িয়ে পড়ল
ভাবলাম জীবনের সব অধ্যয়ন
সুন্দর কথামালার বিন্যাস সবই গেল জ্বলন্ত চিতার লেলিহান শিখায় ধুয়ে।
আর ফিরে আসবে না কোনও দিন তা জানা সত্ত্বেও আমি কষ্ট পাই না আর
কারণ আমি সর্বদাই-যে দেখতে পাই তাঁকে
তাঁর আমৃত্যু প্রাত্যহিক কার্যকলাপের বৈচিত্র্যময় কোলাজে।