হে আল নূর মসজিদ আমি তোমার মত হতে চেয়েছিলাম,
আমার নাম জায়েদ মুস্তাফা আমার বয়স তের,
আমার বাবা খালিদ দাদা হামজির একসাথেই তোমার প্রাঙ্গণে
সেজদায় শরণাপন্ন হয়ে ছিলাম,
আল্লাহর রাসুল এখানেই আছেন সে কথা ভেবেই আমার প্রিয় মা-কে
যে আমায় গর্ভধারণ করেছে যার রক্ত আমার মাতৃদুগ্ধে,
আমাকে দুগ্ধ সেবন করিয়ে তিলে তিলে বড় করেছে তোমার জন্য,
আমি জানি আমার জন্মদায়িনী মা যে আমায় পৃথিবীর আলো দেখালো,
আমাকে পৃথিবীর রূপ রস গন্ধ এইসবের সাথে পরিচয় করালো,
তাঁর এই মসজিদে আসা বারণ
কারণ হাদিসের ফজিলত ছাড়া জায়েজের কী মূল্য আছে?
তার ওপর নারীদের জন্য নিজের ঘর-ই অতি উত্তম স্থান নামাজের,
একদিকে উত্তম অন্যদিকে জায়েজ।
যার শরীরের অংশ থেকে একটু একটু করে আমাকে
তের বছরের বালকে তৈরি করেছে,
আমি যোগ্য হয়ে উঠলাম নিজেকে সমর্পনের জন্য,
সে এখনো যোগ্যতা অর্জন করতে পারল না তা কি-করে মেনে নেই?
আমি যে-অধিকার পেয়েছি, আমার প্রিয় মায়ের সেই অধিকার নেই,
সেখানে আমার অধিকার অনর্থক নয় কি?
আমার মা যদি ঘরে থেকেই তোমার প্রার্থনায় রত থাকতে পারে,
আমি সন্তান হয়ে মায়ের পাশে বসে প্রার্থনার অধিকার পেতে পারি না?
সে সব ভুলে গিয়ে পিতার কথাকে বেশি মর্যাদা দিয়েই
এখানে এসেছিলাম, আমরা তিনজনেই একত্রে হাঁটু গেঁড়ে
দুই হাতে প্রার্থনায় ব্রত ছিলাম।
আমি কিশোর আমার কোন ভুল হতে পারে,
কিন্তু আমার বাবা আমার দাদা তাঁদেরতো ভুল হবার নয়,
প্রার্থনার পরিবর্তে শূন্য হাতে উঠে এলো হঠাৎ গুলিবর্ষণের উপহার,
তোমারতো অসীম ক্ষমতা তুমি সব জানো,
তাহলে তুমিই কি পাঠিয়েছো সেই পাষন্ড অত্যাচারীকে?
কোন প্রতিশোধ নিতে, কোন অপরাধের শাস্তি দিতে?
আমাদের একবার বললেই পারতে আমাদের ভুল সংশোধন করে নিতাম,
সে সুযোগ দিলে না;
সবকিছু সৃষ্টির মূলে তোমার-ই কথা সেকথা সবাই জানে,
তাহলে সে রকমই মস্তিষ্ক, দৃষ্টি, হৃদয় দিয়ে পাঠাতে পারতে,
তাহলে আমাদের প্রার্থনায় কোন ভুল থাকতো না,
আর এরকম নিষ্ঠুর শাস্তির বিধান তোমাকে দিতে হতো না,
দেখো কত রোবট কত কম্পিউটার কত নিখুঁত কাজ করে,
আমাদের কেন ভুল হবে?
আজ আমার মা মাটি-চাপা দেবার আগে শেষ বিদায় জানাতে পারলো না,
আমি মার থেকে পঁচিশ বছরের ছোট হয়েও পুত্র গুণে
একটু বেশি সময় পেয়েছি - খুব বেশি নয়,
দু-তিন ঘন্টা পরে শেষ বিদায় জানাতে পারলাম।
আমার পায়ে গুলির আঘাত, আমার শেষ বিদায় জানানো হুইল চেয়ারে,
কৃতজ্ঞতা জানাই তাঁদের যাঁরা আমাকে ঠেলতে ঠেলতে
সমাধি ক্ষেত্রে নিয়ে এসেছে।
তাঁদেরই একজন আমাকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে বলল,
শেষ শ্রদ্ধা কিভাবে জানাতে হয় আমার তা-জানা নেই,
তবুও প্রথমবার উচ্চারণ করে বললাম,
“তোমাদের পাশে আমার বসে থাকার কথা নয়।
তোমাদের পাশে আমার শায়িত হওয়া উচিত ছিল।“