একদা একবৃদ্ধ মশাই
কাপড়ের পুটলি নিয়া,
সুনামের সহিত ব্যবসা করিত
গঞ্জে গঞ্জে গিয়া।
তেমনি একদিন ঠাকুরহাট গঞ্জে গিয়া
বৃদ্ধ, পড়িল বিড়ম্বনায়,
বাড়িতে তাঁহার স্ত্রী পুত্র সন্তান
পীড়াতে মরিয়া যায়।
কি করিবে বৃদ্ধ ভাবিতে লাগিল
গদিতে বসিয়া কাঁদে,
এমন সময় আবদুর করিম নামে এক বাছা
ভিক্ষা করিতে আসে।
করিমকে দেখিয়া সাহস বাড়িল
ফুলিয়া উঠিল বুক,
বৃদ্ধের মন, নাড়া দিয়া গেল
ঝরিল আনন্দ অশ্রু সুখ।
বৃদ্ধ কহিল , করিম বাছা ধন
দোকানটা পাহারা দে,
ক্ষণবাদে আমি ফিরিয়া আসিব
এই গঞ্জে আমার আপন আছে বা কে!
এই বলিয়া বৃদ্ধ মশাই
চলিয়া গেলো বাড়ি,
আপন দোকান, আপন গদি
খরিদদারদের ছাড়ি।
দিন পুরাইল সন্ধ্যা হইল
আসিল নতুন দিন,
দায়িত্বের ভার কাধেঁতে উঠিল
বাড়িল সততার ঋণ।
দোকান খুলিয়া গদিতে বসিয়া
আরম্ভ করিল বিক্রয়,
সততা সুনাম উর্ধ্বগতি কারবার
বাড়িতে লাগিল আয়।
মাস চলিয়া যায় , বছর পুরায়
বৃদ্ধের আসার পানে চেয়ে,
সবগুলো দেনা শোধ করিল
চারখানা দোকান গেল বেড়ে।
এভাবেই পুরালো বছর সাতে'ক
বৃদ্ধ আসার ক্ষণ,
করিম বলিয়া ডাকিয়া উঠিল
বৃদ্ধ মশাইয়ের স্বর ছিল কি এমন!
দৌড়িয়া আসিল করিম বাছা
সালাম করিল পায়,
আপনার দোকান বুঝিয়া লন
দোষ ক্ষমা করিবেন নিরালায়।
এইলন আপনার হিসাবের খাতা,
চারখানা দোকানের দলিল,
আপনারে দিয়া তৃপ্ত হইলাম
পুলকিত মন হইল রঙিন।
অঝোর ধারায় বৃদ্ধ কাঁদিল
বারি ঝরিতেছে দু'চক্ষু বেয়ে,
ভাবিলাম! তোমাকে পাইলে
দু'আনা ভিক্ষা, নিবো একটু চেয়ে।
অর্থের অভাবে স্বজন মরিল
চিতা জ্বালানোর কেউই নাই,
তোমার সততায় প্রসন্ন হইলাম
অর্থ বিত্ত কিছুরই লোভ নাই।
তোমারই ঘামে গড়া, রাজকীয় সুখ
তোমাতেই দিলাম সফেঁ,
মনের বাসনা তীর্থে যাইব
ব্যবস্থা করিয়া দিও প্রাতে।
সততার বলে বাঁচিয়া থাকো বাছা
আশীর্বাদ রইলো তোমার তরে,
তোমার কীর্তি খ্যাতি বাড়াবে
জনম জনম পরে।