,             আমি ভবসাগর পাড়ি দিতে
               ভাসাই জীবনতরী
               পাহাড়সম ঢেউ চুবিয়ে ছাড়ে
               কেমনে পাড়ি ধরি?
               হায়রে ভাসাই জীবনতরী l

               বুকের মাঝে ঠকঠক করে
               ভয়ঙ্কর ধ্বনি বাজে!  
               উত্তাল সাগর আছড়ে মারে  
               ঊষা হতে ঘোর সাঁঝে।
               আমি জল সেচি ঝড়ের মাঝে।
  
               মাঝদরিয়ায় পাল তুলি যবে
               সাঁইকে ডাকি অনিবার;    
               ঝড়ের বেগে যদি পাল ছিঁড়ে      
               সাঁই কলঙ্ক তোমার।  
               দয়াল আমায় করো পার।    
  
              আমি বুঝি না কোনো উজানভাটি
              অকূলপাথারে পড়ি’    
              ঝড়ের কবলে দিশেহারা হই
              কখন জানি প্রাণে মরি।
              আমি কেমনে পাড়ি ধরি!

              জীবন আমার হবে অবসান,
              ডুববে জীবনতরী  
              আমার সকল গ্লানি-অপকাজ      
              রয়েছে জগৎ ভরি।
              আমি পরমে স্বীকার করি।    

              হরেক পণ্য তুলে নিয়ে খুব      
              বোঝাই করি তরীখানি,  
              ঘাটে ঘাটে পণ্য বিলাতে গিয়ে    
              বেলা ডুবে যায় জানি।      
              তবু বেয়ে চলি তরীখানি।  

              অতিবাওয়া এই জীবনতরীতে  
              পচন ধরে গেছে কাঠে,  
              নোনা জলে খাওয়া ক্ষয়িত তরী
              বেকার পড়ে থাকে ঘাটে।
              কখনো অকাজে দিন কাটে।  

             জীবনতরী নিয়ত বেয়ে চলি      
             ভবসাগরের বুকে
             ঝড়-বাদল-ঢেউ উপেক্ষা করে  
             তরী চলে সুখেদুঃখে।    
             সদা গুরুনাম জপি মুখে।
  
             ভবসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে
             আমি হয়েছি পরিশ্রান্ত!
             পথ খুঁজেখুঁজে বারবার আমি  
             হয়ে গেছি পরিভ্রান্ত।
             আমি হয়েছি পরিশ্রান্ত।

             জীবনতরী অতিবাওয়ার ফলে  
             অচল হয়েছে প্রায়;  
             জোড়াতালি আর মেরামত কোনো  
             কাজে আসে না তায়।
             আমি কাঁদি পড়ে সাগরায়।
    
             জন্ম সার্থক আমার হবে যদি  
             সুকাজ করে থাকি ভবে,    
             সুকাজের ফলে খ্যাতি পেয়ে নাম    
             চিরকাল অমর রবে।  
             মানবজন্ম সার্থক হবে।  

             ধনদৌলতে কেউ হয় না ধনী  
             যদি মন বড় না থাকে,  
             টাকার মোহে অনাহারে থাকে    
             টাকা গাঁইটে গুঁজে রাখে।    
             মানুষ কৃপণ বলে তাকে।

             আর যে ভরসা নাই অন্তরে
             সাঙ্গ হবে তরী বাওয়া,
             ডুবে যাবে তরী অতলসায়রে
             বন্ধ হবে আসা-যাওয়া।
             সাঙ্গ হবে চাওয়া-পাওয়া।