-সিলভার স্প্রিং মেরিল্যান্ড
স্মৃতির বলয়ে ব’সে কাঁদে মনবিহঙ্গ-
অবিরাম দুঃসহ বিরহানলে পু’ড়ে মরে।
ওগো ছেলেবেলাকার নিরুপমা, সুলোচনা-
মনে পড়ে চৈত্র-বৈশাখে অলস বিকেলে
ঝালমুড়ি, আষাঢ়ে কাঁঠাল পেয়ারা---!
শ্রাবণে আমড়ার ভর্তা, কিযে মুখরোচক
সুস্বাদু তৃপ্তিদায়ক ভোজসভা হতো-
নিভৃতে কোন একান্ত অভিসারে!
নবীন জলে ঝাপাঝাপি দুর্বার জলকেলি,
ফিরে যাই বসন্তে কোকিলের বিরহবিধুর
কুহুতানে; মধুচয়নে বনে বনে বিহার করা
দস্যি ছেলের নানা কর্মসূচী;
অতীতে ফেলে আসা কতযে মনোজ্ঞ ক্রীড়াকৌতুক!!
শৈশবের মনোরম জীবনস্মৃতির ডাইরী খুললে দেখি-
পার্বতী সরেন কল্লোল হিমু অঞ্জনার সনে--
কতবার মিছেমিছি বরকনের খেলাঘর রচনা।
সেসব স্মৃতি আজ জলছবির মত বিস্মৃত প্রায়;
নিজ গাঁয়ে মেলার আনন্দ উপভোগ যা ছিলো
স্বর্গসুখেরই মত; সারাদিনমান ধ’রে মেলাঙ্গনে
থেকে হাজারো মানুষের পদদলিত ধূলি আপন
গায়ে মেখে ঘরে ফেরা;তাতে মায়ের বকুনি ছিল
আবশ্যক মহাপুরষ্কার; ছিন্নবাধা পলাতক বালক,
ঘরে ফিরে বকুনি থেকে রেহাই ছিলোনা।
কলকাতায় চাকুরে-বাবার আগমনে কিযে হর্ষ স্রোতে-
তনু-মন ভাসতো, নতুন জামাসহ ফুটবলও পেতাম ।
আর পেতাম কলকাতার সুস্বাদু কাইদানা
বিস্কুট; ক’টা দিন বেশ ভালোই কেটে যেতো।
মনে পড়ে শ্রাবণের অঝোর বারিবর্ষণ----
ঝমঝম ছমছম টিনের চালে শ্রুতিমুগ্ধ বর্ষণের
ধ্বনি যেন সঙ্গীতের অনুষঙ্গ। আষাঢ়-শ্রাবণের
বারিধারা আহ কিযে মধুর, যেন সঙ্গীতানুষ্ঠান!
হেমন্তে হালকা হিমাগমে নবান্নের ঘনঘটা------!
মায়ের স্নেহসিক্ত হাতে চিড়া-মুড়ি খইএর আয়োজন--
পৌষে রকমারি পিঠাপুলির সৌরভে মন মেতে থাকা,
সেসব স্মৃতি আজ বিস্মৃ্ত, দুষ্প্রাপ্য এ দারুণ প্রবাসে।
ক্লান্তি-অবসাদ-ভরা মানবজীবনের আজ সেইমতো-
সুখভোগের উৎস-অনুষঙ্গ খুবই সঙ্কুচিত,বিলুপ্ত
ভিন্নতায় পরিণত;
কোথায় সেই নৌকাবাইচ-?হয়তো আছে,
কিন্তু পূর্ববৎ নেই, নদী আছে জল নেই,
নদী আছে দুর্দশাময় বন্যা আছে-------
প্লাবনের করাল গ্রাস নিশ্চিহ্ন করে জনপদ।
পূর্বকালেও এমনটি হতোনা তা নয়----
প্রাকৃতিক দুর্যোগ চিরদিনের। বাংলার ভৌগোলিক
চিত্র আমূল পরিবর্তিত।স্বীয় কৃষ্টি-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য
অপসংস্কৃতির ভীড়ে নিস্তব্ধ, অপমানিত নিষ্পেষিত।
আজ এই করোনাকালে আতঙ্কময় অবসরে
অতীতের কতশত স্মৃতি ছবির মত ভেসে ওঠে
স্মৃতির ফ্রেমে......!
হ্যাঁ নানাবিধ উন্নয়নের প্রাচুর্যও অনস্বীকার্য।
নিজস্ব ঐতিহ্য-সংস্কৃতিকে দূরে রেখে বিরহীহৃদয়
আজ জীবনস্মৃতির জানালাপাশে গুমরে কাঁদে।।