এই ধরণি মেলা প্রাঙ্গণ হেথা মিলে সাধের মেলা,
প্রভাত হতে সাঁঝ অবধি চলেই নানান খেলা।
প্রাণীরা সব সুর তুলে গায় সুখ-বেদনার গান,
কেউ হেসে হয় কুটিকুটি কেউ কেঁদে ম্রিয়মাণ।
মেলা প্রাঙ্গণ লোকারণ্য বেসামাল পদভারে
সবাই খুঁজে অমূল্য ধন মেলার চারিধারে।
যেতেই হবে মেলাশেষে অচিন মেলার দেশে,
কাঁদবে সবে অঝর ধারায় বিদায় দিবে শেষে।
সংসারে যারা কাছের মানুষ এই জীবনের তরে
যাবার কালে কেউ যায়না সাথে, মাটির শূন্য ঘরে?
কীটেরা খায় মরদেহটি ওটাই ওদের ধর্ম
দেহভোজে মগন থাকাই কীট বাহিনীর কর্ম।
সাদা কাফন প’রে পান্থ ঘুমাবে সমাধিতলে
কেউ দিবে পুষ্পরাজি ভিজিয়ে নয়ন জলে।
জীবনে কখনো দেয়নি যারে প্রীতির পুষ্পমালা
মরণে কেন দিতে আসে তারে মিশ্রফুলের ডালা?
কে নিবে এই ফুলের ডালা সাদরে গ্রহণ করে? প্রাণহীন পথিক কবরতলে শায়িত চিরতরে !
মেলাশেষে যায় যে পথিক অনন্তের পথ ধরে
অন্তিম বিদায় নেয় অতিথি যমের রথে চড়ে !
সে আর ফিরবে না কভু নশ্বর ধরাতলে
চিরনিদ্রায় শায়িত রবে নিঝুম নিরলে।
ডাকবে না আর ক্ষীণ কণ্ঠে আমায় খেতে দাও
বলবে না আর মনোরঙ্গে আমার পানে চাও।
জন্মমৃত্যুর এই তো খেলা মোহন বিশ্বময়
কেউ হেরেছে জীবনযুদ্ধে কেউ করেছে জয়।
আমি যে আমার নইকো আমি বিলক্ষণ তা জানি,
আমার বলতে নেই কোনো ধন এই সত্যকে মানি।
দেহ খাঁচায় বসত করে আত্মা নামক পাখি
দিনমান ধরি রুদ্ধ খাঁচায় করে ডাকাডাকি।
খাঁচার দুয়ার খুলে পাখি পালিয়ে যেতে চায়,
সুযোগ বুঝে পালায় পাখি দূর আকাশের গায়।
দেহটি গ’লে বিলুপ্ত হবে মাটির বিছানায়
মিলিয়ে যাবে সকল সত্ত্বা মরণ ঠিকানায়।
মৃত্যু হ’ল চিরসত্য সকলের আছে জানা
নিঃশব্দেই আসে শমন অজান্তে দেয় হানা।
শব্দার্থঃ কুটিকুটিঃ আকুল।ম্রিয়মাণঃ কাতর(শোকে ম্রিয়মাণ)
লোকারণ্যঃ লোকে ভরপুর।পুষ্পরাজিঃ নানা ফুলের সমাহার।
অন্তিমঃ শেষ।বিলুপ্তঃ ক্ষয়প্রাপ্ত, নিশ্চিহ্ন।শমনঃ মৃত্যুদেবতা,
যমদূত।হানাঃ আক্রমণ।পথিকঃ এখানে বা এই নশ্বর জগতে
আমরা সকলেই পথিক।পান্থঃ পথিক। অতিথিঃ এই জগতে
সবাই অতিথি।