বর্ষা আসে ওই গগন ফাটিয়ে গুরুগম্ভীর রবে
বধু-ননদী ছুটাছুটি ক’রে অন্তপুরে যায় সবে।
অঝোর ধারায় ঝরে বাদল প্রবল মুষলধারা,
যেন লাস্যময়ী নূপুর বাজিয়ে নৃত্যে মাতোয়ারা!
কে যেন ওই হাঁকিছে চেঁচিয়ে ধ্বনিত বৃষ্টিধারে
রাখাল বালক খুঁজিছে কি ধেনু, কালচে অন্ধকারে?
ছুটাছুটি ক’রে মরিছে গৃহস্থ গবাদি পশুর তরে
প্রাণ কাঁপে তার শুধু অনিবার বজ্রপাতের ডরে!
গাছের ফল অল্প পড়িছে তলে কুড়াতে পারেনা সে
ছেলেপুলে সবাই বর্ষণ-ফাঁকে লুডুতে মেতেছে যে।
ঘরনী করিছে নকশী কাঁথার পরিকল্পনা তার,
বর্ষা-ছাড়া নিখুঁত কাজের সুযোগ পাওয়া ভার।
বর্ষাকালে অলস ক্ষণে গল্পের আসর খুব জমে
ক্যারাম-খেলায় বালকগণ বেশ মত্ত পুরোদমে।
আষাঢ় মাসে বর্ষাগম হয় ষড়ঋতুর এই ধারা,
বর্ষা যদি গ্রাস করে সব, মানুষ হয় পুঁজিহারা!
ব্যাঙগুলো ওরা থাকে সুখে একত্রে ডুবোক্ষেতে
বৃষ্টি-ছন্দে গান তুলে ওরা পুলকে থাকে মেতে!
বর্ষা-দিনে রসনার সুখ বড়াভাজা-ভর্তা-ভাতে
কতযে সুস্বাদু রান্না সাধে স্নেহময়ী তার হাতে!!
কি জাদু আছে মায়ের হাতে অবাক-করা তার হাত
মায়ের বিষয়টি সতত ভেবে কাটাই দিবারাত!!
বর্ষার স্মৃতি আছে অনেক, স্মৃতিগাথা বহু কথা,
এমন দিনে বেজে উঠে প্রাণে বিরহের চাপা ব্যথা!
ঝিল্লিমুখর বাদলা রাতে মেঘপরী ঘুমপাড়ায়
কোনোজন যেন এই মধুরাতে সঙ্গীরে না হারায়!
মহামারিকালে মাতৃভূমিকে অনিবার মনে পড়ে,
মমতাময়ীরে ভাবতে গিয়ে বিরহে অশ্রু ঝরে!!
খাল-বিল-ডোবা জলে ভরভর অবাধ বরিষণে
কবি লিখে তাই বর্ষার কথা একাকী নিরজনে!
আর কত ক’ব বর্ষার কথা এক এক করি’ ধরি,
আজকের মত এই বর্ষাভিত্তিক কবিতা সাঙ্গ করি!!