তুমি কি জানো?
আজ আমার কী আনন্দ লাগছে!
বাংলাদেশের মুক্তভূমি থেকে তোমাকে লিখছি!
এখানে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেয়া কতটা স্বস্তির!
অথচ, দু'সপ্তাহ আগেও এ জায়গাটা পরাধীন ছিল।
এই মধ্যরাতে একটা পরিত্যক্ত কুঁড়েঘরে একাকী জীবন কাটাচ্ছি।
যেখানে ঘরের মেঝে থেকে দু'ফুট নীচে খোঁড়া গর্তে কাঠের পাটাতনে শয্যা পেতেছি।
গুলি আর গোলা হতে বাঁচতেই চারপাশে মাটির প্রাচীর ঘেরা অন্ধকার প্রকোষ্ঠে একটা নিভু নিভু কুপি জ্বেলে রাত পার করছি।
তবুও কোনো নিশ্চয়তা নেই, যেকোনো সময় ওদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারি।
মা, মাটি আর মাতৃভূমির জন্য ভয়কে জয় করে যখন যুদ্ধে নেমেছি, তখন কি আর এসব নিয়ে মন খারাপ করা চলে?
মাঝে মাঝে হাস্যকর ঘটনাও ঘটে।
অল্প দূর থেকে দিনরাত গোলা নিক্ষেপ করেও ওরা যখন আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারে না, তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে গিয়ে আমরা হাসি।
কী তাদের লক্ষ্যভেদের নমুনা!
অথচ আমরা এখন পর্যন্ত কোনোদিন খালি কলসি নিয়ে ফিরি নাই।
প্রতিটা অপারেশনেই ওদের কাউকে না কাউকে শিকার করতে সমর্থ হয়েছি।
এ যেন নিঃসন্দেহে অসামান্য লক্ষ্যভেদ!
বাংকারে ফিরে আমরা পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করে আবার নতুন লড়াই শুরু করি।
জানোই তো, গোলার আঘাত থেকে বাঁচতে বাংকার কিছুটা নিরাপদ।
ভাগ্য খুব বেশি খারাপ না হলে বাংকারে গোলা পড়ে না।
এই যে দ্যাখো তো!
কতো কথা বলে ফেললাম।
বিগত কতগুলো দিন পুরোনো স্মৃতি রোমন্থনের একটুও সুযোগ হয়নি-
বলতে গেলে ফুরসতই পাইনি।
সর্বশেষ তোমাকে লিখেছিলাম দেড় শতাধিক মাইল দূরের একটা ক্যাম্প হতে।
আজকের পরে আবার কবে লিখতে পারবো নাকি এটাই জীবনের শেষ লেখা, সেটা সত্যিই অজানা।
এখনো শঙ্কা, এখনো অনিশ্চয়তা, কখন যে কী হয়?
তবুও বাংকারে থেকে স্বপ্ন দেখি -
যদি ওদের বুলেট আর নির্দয় গোলার আঘাত থেকে কোনোভাবে বেঁচে ফিরে আসতে পারি, তাহলে স্বাধীন বাংলাদেশে আবারও দেখা হবে আমাদের।
সুন্দর এক ঘাস-বিছানায় আমাদের আড্ডা জমবে!
আর ওদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে এ স্বপ্নই আমার শক্তির উৎস!
আমি মারা গেলেও আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত!!
২৮ ডিসেম্বর ২০২০ || রাত ১২.৫৫ টা।
[ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ লেফটেন্যান্ট আশফাকুস সামাদ বীর উত্তম এর লেখা চিঠি অবলম্বনে]