দ্যাখোতো বাবা!
আমার শরীরটা নাকি আমি নিজে ছুঁতে পারবোনা!
এটা কেমন কথা?
আমার নাক আমি চুলকাতে পারবোনা,
আমার চোখ আমি কচলাতে পারবোনা;
আমার মুখে আমি হাত দিতে পারবোনা।
একজন এসে বললো-
কী জানি, এক জীবাণু এসেছে - খুবই মারাত্মক, খুবই ছোঁয়াছে!
সারা দুনিয়ার লাখ লাখ মানুষকে আক্রান্ত করছে!
আবার, লাখ লাখ মানুষ নাকি মারাও যাচ্ছে!
তা থেকে বাঁচার জন্য -
নাক চুলকানো, চোখ কচলানো বা মুখে হাত লাগানোর আগে নাকি সাবান দিয়া বিশ সেকেন্ড হাত ধোয়া লাগবে!
আচ্ছা! বলতো দেখি-
আমি গরীব মানুষ!
এতো সাবান আর বিশুদ্ধ পানি কোথায় পাই?
জীবন পার করলাম কোনোরকমে হাত ধুয়ে, না ধুয়ে..!
খাবার আগেও তো ঠিক মতো হাত ধুতে মনে থাকে না!
বাথরুম থেকে বের হয়েওতো হাত ধোয়ার অভ্যাস নেই!
এটা খালি গরীব বলে, আমার একার অভ্যাস নয়.....!
আমাকে নিয়ে হেসো না যেন!
আমি তো দেখেছি, কতো স্যুট-কোট পরা ধনী, ভদ্রলোক, ছোটো-বড়ো অফিসারও ঠিকমতো হাত ধোয় না!
খালি আমার কথা না, কতোজনকেই দেখলাম,
ছেঁড়া-ময়লা কাপড়ে বা পরনের শাড়ি-লুঙ্গিতে হাত মুছে... জীবন পার করতে!!
এখন নাকি দিনে ১৫/২০ বার হাত ধোয়া লাগবে!
কতো কষ্টের কাজ বলতো!
তারপরও কী আর করবো?
এতো করে যখন হাত ধোয়ার জন্য সবাই বলছে, রেডিও -টিভিতেও নাকি দেখাচ্ছে, মাইকিং করতেও শুনলাম....
তাহলে আমি সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস করবো।
বাঁচাতো লাগবে!
আচ্ছা!
হাত ধুয়ে না হয় নাক, মুখ, চোখ ছুঁইলাম;
নিজের শরীরও নিজের হাতকে বিশ্বাস করতে পারছে না!
কি আর করা!!
কিন্তু!
আবার বলতেছে "মাস্ক" দিয়ে নাকি নাক-মুখ ঢাকা লাগবে!
সারাজীবন নাক -মুখ খোলা রেখে চলার অভ্যাস!
মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিচ্ছি, সবকিছুর গন্ধ নাকে লাগছে, দুর্গন্ধেও নাক-মুখ ঢাকি নাই, ময়লার ভাগাড়ের পাশ দিয়ে কোনোভাবে দম বন্ধ করে পার হচ্ছি!
রাস্তায় ধূলাবালি, গাড়ির ধোঁয়া, দূষিত বায়ু কতো নাক দিয়ে টানছি, কোনোদিন কিছুই তো হয়নি!
মুখ খোলা রেখে পথে-ঘাটে হেঁটেছি, যখন যা ইচ্ছা বলেছি-খেয়েছি; পান চিবিয়েছি, বিড়ি- সিগারেট টেনেছি; যখন তখন যেখানে সেখানে থুথু ফেলেছি।
নাক-মুখ ঝেঁটিয়ে মানুষের ভীড়ে কতো হাঁচি-কাশি দিয়েছি!
আবার, খোলা মুখে কতো কথা বলেছি, অভাব- অনুযোগ-অভিযোগ করেছি, গীবত গেয়েছি, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে চিৎকার করেছি;
অধিকার আদায়ের জন্য মিছিলে শ্লোগান দিয়েছি।
এখন বলতো দেখি,
কিভাবে মুখখান ঢেকে রাখি?
আমার না মুখোশ! না না ঐ মাস্ক... পরলে দম বন্ধ হয়ে আসে!
মনে পড়ে যায়, একবার কোন একটা আন্দোলনে মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ করার সেসব কথা!!
আর, এখন বলছে করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য মুখে মাস্ক লাগিয়ে বাইরে যাওয়া লাগবে!
দ্যাখোতো!
মাস্ক পরে বাইরে গেলে, আমি খোলা বাতাসের শ্বাস টানবো কিভাবে?
পথে- ঘাটে হাঁটতে হাঁটতে, ফুটপাতে কিছু খেতে মন চাইলে খাবো কিভাবে?
বিড়ি-সিগারেট টেনে ধোঁয়া ছাড়বো কিভাবে?
পান খেয়ে ঠোঁট লাল করে অন্যদের দেখাবো কিভাবে?
পিচকারি মেরে পানের পিকটা খেয়াল খুশি মতো পেলবো কিভাবে?
যখন তখন ইচ্ছামতো মুখের থুথু পেলবো কিভাবে?
হাঁচি-কাশি দিতেও তো খুব ঝামেলা হবে!
আমার মনের কথা, প্রাণের ব্যথা, অভাব -অনুযোগের কথা মাস্ক ভেদ করে অন্যের কানে পৌঁছাবো কিভাবে?
অধিকার আদায়ের মিছিলে শ্লোগানে শ্লোগানে আমার কথাগুলা মাস্ক ভেদ করে কেউ শুনবে নাকি?
তারপরও এতো করে যখন সবাই বলছে,
সবার ভালো থাকার জন্য মাস্ক পরেই না হয় ঘর থেকে বাইরে যাবো।
তাও অন্ততঃ করোনার হাত থেকে বেঁচে যাবে সবাই!!
এ কী! হাত ধুতে রাজি হলাম, দম বন্ধ হলেও মাস্ক ব্যবহার করবো বললাম ;
এখন আবার বলে, দূরেও থাকা লাগবে!
সামাজিক নাকি শারীরিক দূরত্ব এটা আমার খটকা লাগে!
একজন থেকে আরেকজন কমপক্ষে ০৬ ফুট দূরে থাকা লাগবে।
এটা কিভাবে সম্ভব হবে?
আমি অভাবি মানুষ!
পেটের তাগিদে গ্রাম থেকে এসে এ শহরের রাস্তার ধারে একটা বস্তিতে ছোট্ট একটা খুপরি ঘরে কোনোরকম মাথা গুঁজি বউ- পোলাপান নিয়ে।
দিনে পেটের দায়ে কাজের তাগিদে বাইরে থাকি, খালি রাতে ঘুমানোর জন্য বস্তির ঘরে ফিরি।
সকাল হলে আবার কাজে বের হয়ে যাই।
যদি করোনা থেকে বাঁচার জন্য ০৬ ফুট দূরে থাকাই লাগে তাহলেতো বাসায় যাওয়া যাবে না।
আমি তাহলে রাত কাটাবো কোথায়?
একজন বুদ্ধি দিলো,
ঘরে থাকলেও নাকি করোনাভাইরাস থেকে দূরে থাকা যাবে।
কিন্তু, কতোদিন থাকা লাগবে, তা বলেনি!
আচ্ছা! এখন আমাকে বুঝাওতো আমি ঘরে বসে থাকলে পেটে ভাত জুটবে নাকি?
বাহিরে গিয়ে কাজ না করলে, কে আমার ঘরে রোজ খাওয়া দিয়ে যাবে?
আমার রোজগারের উপর একার পেট না শুধু, বউ-বাচ্চাদের পেটও চলে।
একদিকে খাওয়ার জোগান, আরেক দিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সাবান আর মাস্ক কিনতেও তো টাকা লাগবে।
এসব খরচের টাকা রোজ কে আমাকে দিবে?
সবকিছু ভেবে কোনো কূল পাইনা।
একদিকে জীবন আরেকদিকে জীবিকা!
কোনটাকে যে বেছে নিবো, হিমশিম খাচ্ছি।
কবে যে করোনাভাইরাস বিদায় নিবে?
কোন দিন যে আগের মতো মুক্ত শ্বাস নিতে পারবো, প্রাণ খুলে কথা বলতে পারবো?
কোন দিন আগের মতো হাত না ধুয়েও অনেক কাজ করতে পারবো?
কোন দিন যে আবারও সবার সাথ কোলাকুলি, গলাগলি করে, কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে মিলেমিশে চলতে পারবো?
আমি সেদিনের জন্য অপেক্ষায় আছি।
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
বড়লেখা, মৌলভীবাজার;
২২মে ২০২০; (১৩/০৯/২০- সংস্করণ)
রাত ১.৪০ টা।