তুমি রাস্তায় পেরোলে
যে হাজারটা পুরুষ তোমার দিকে
হা করে তাকিয়ে থাকতো
তুমি যদি আমাকে তাদের একজন মনে করতে
তাহলে ভূল করেছিলে…….
আসলে আমি তোমার কাছে একজন
হতে চেয়েছিলাম।
তোমায় দেখলে আড়ালে যারা
…..ফিগার দারুন……সেক্সি গার্ল…..ইত্যাদি মন্তব্য
করত তারা বাকী নয়শত নিরানব্বই জন
যারা সবসময় তোমার পিছু পিছু ঘুরে বেড়াত
বলে তুমি নিজেকে মহান রুপবতী মনে করতে
এ বিশেষণ তাদের দেওয়া।
তাদেরই একান্ত ইচ্ছে ছিল তোমার
আম,জাম,কাঁঠাল,আনারস খাওয়ার।
আমার নয়।
হয়তো তুমি তাদের এ সমস্ত কুমন্তব্য
পছন্দ করতে;তাই প্রতিবাদ করতে না।
তোমার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা কলেজে
আমি একটি বেঞ্চে একা বসেছিলাম
সেদিন প্রথমবার তোমার নূপুরের শব্দ
আমার নীরবতা ভঙ্গ করেছিলো।
তবুও তো আমি তোমার মুখের দিকে
চোখ তুলে তাকাতে পারিনি।
তুমি পায়ে পায়ে দূরে চলে গেলে
আমি দূরে আড়াল থেকে তোমায়
প্রানভরে দেখেছিলাম।
সেদিন তোমার ঠোঁট শত জন্মের বহু আকাঙ্খিত
চুম্বন এনে দিয়েছিলো আমার ঠোঁটে।
তোমার কেশবিন্যাসের কারুকার্য
আমায় নদী ও সমুদ্রের মধ্যে পার্থক্য দেখিয়েছিলো।
সেই মুহুর্তে আমি যেন অপ্রকৃতিস্থ বিমানে
উড়ে গিয়েছিলাম ভূ-জগতের বাইরে….
তারপর বহুদিন গেল
কতদিন কতবার মুখোমুখি দেখা হয়েছিলো
কিন্তু,তুমি কোনোদিন একটি কথাও বলোনি।
অথচ, তুমি বাকী নয়শত নিরানব্বই জন
পুরুষের সঙ্গে অবাধে কথা বলতে।
এর জন্যে যদি তুমি আমায় কাপুরুষ বলো–
তাহলে আমি জোর গলায় বলতে পারি–
আমি কাপুরুষ নই।
আসলে আমি আর বাকীদের মতো
তোমার সঙ্গে কথা বলার জন্য
পেন নেই……..নোটস নেই……
বলে নাটক করতে পারি না।
কতদিন কতবার প্রত্যাশা করেছিলাম
হয়তো তুমি আমার সঙ্গে কথা বলবে।
বুঝতে পারবে কতগুলো বিনিদ্র রাতের
নক্ষত্রপুঞ্জ বন্দি করে রেখেছিলো দু-চোখ ।
কতগুলো শ্রাবনের বন্যাধারা
বাঁধ দিয়ে বেঁধে রেখেছিলো এই মন।
কিন্তু ,তুমি সেই জলের পরিমাণ
কোনোদিন মেপে দেখোনি।
;সেই নক্ষত্রপুঞ্জের জ্যোতি তুমি অনুভব করোনি।
একদিন শুনলাম কলেজের এক্সিবিশনে
তুমি অংশগ্রহন করছো।
এক্সিবিশনের আগের দিন সারা রাত
একটি একটি করে সঞ্চিত করেছিলাম
কথার পাহাড়, প্রশ্নের সম্ভার ।
সেদিন তুমি আমায় দেখেই সরে গিয়েছিলে।
আমি দেখতাম,
তুমি ঐ নয়শত নিরানব্বই জন
পুরুষের সাথে হাসছো। খেলছো।
ক্যান্টিনে আড্ডা দিচ্ছো। বাজারে যাচ্ছো।
কিন্তু তোমার একটি বাক্যও আমার
সঙ্গে ব্যয় করা যেত না।
তখন কষ্ট পেতাম, খুব কষ্ট পেতাম।
তুমি এই কষ্টের সিঁড়ি বেয়ে উঠে
আমার জগৎ
উপলব্ধি করার চেষ্টা কোনোদিন করোনি।
দেখতে দেখতে একটি একটি করে
তিনটি বছর ফুরিয়ে গেলো। কলেজ শেষ।
তারপর বহুদিন তোমার খোঁজ করিনি
কয়েক বছর পর
হঠাৎ দেখা হলো এক অচেনা শহরে।
এখন তুমি ব্যস্ত সংসারী
একহাতে অফিসের ব্যাগ
আর অন্য হাতে ছেলেকে স্কুলে পৌঁছাও।
আগে যদিও দৈবাৎ ফুটপাতে চলতে
এখন তো ফুটপাতের দিকে ভূলেও তাকাও না।
**********