গ্রামের এক মধ‍্যবিত্ত পরিবারের ছেলে বরুণ। শিক্ষিত। চাকরি পেল ত্রিশ বছর বয়সে ।
মাস মাইনে ছাব্বিশ হাজার টাকা। চাকরি পেতেই সারা গ্রামে হৈ চৈ রটে গেল ।
গ্রামের মানুষের কাছে চাকরি মানে বিশাল ব‍্যাপার ।
খবর গেল ―এ গ্রামে― ও গ্রামে― সে গ্রামে― উমুকের ছেলে চাকরি পেয়েছে । খুব উঁচু পোষ্ট । এত টাকা বেতন ।
এক-কান― দু-কান―দশ-কান হয়ে
ছাব্বিশ গিয়ে দাঁড়ালো পঞ্চাশ ।
যাই হোক, এবার বরুণের সঞ্চয়ের পালা।
জামা-প‍্যান্ট ছিঁড়ে যায় তবু তার সঞ্চয় থামে না ।
দেখতে দেখতে বছর ছয়েক গেলো
দু-বেলা কম কম খেয়ে ভালোই টাকা ব‍্যাঙ্কে জমেছে ।
সেই টাকায় একটি পাকা বাড়ি করলো ।
এত ভজন-কীর্তন করতে করতে বরুণ চল্লিশ ।
এইবার শুরু হলো আসল কান্ড―
গ্রামে গ্রামে শুরু হলো  চিরুনিতল্লাশি―সুন্দরী যুবতী শিক্ষিতা মেয়ের ।
রব উঠে গেল চারদিকে ‛বরুণ বিয়ে করবে’ ।
মেয়েদের বাপেদের রাতের ঘুম গেল চলে । শুরু হয়ে গেল মেয়েদের বাপে বাপে রেষারেষি ।
কেউ হাঁকে পাঁচ লাখ―কেউ দশ―কেউ পনেরো
বরুণের এখন বাজারে খুব দর ।
বরুণের বাপ বলে, হীরের টুকরো ছেলে আমার দাম তো হবেই। এ খরা বাজারে চাকরি মেলা কী সহজ কাজ !
শেষমেশ বরুণ পনেরো লাখে বিক্রি হলো ।
সুন্দরী মেয়েটিও রাজী হলো এই ভেবে…..
―কিছু না হোক―একটা চাকরি আছে―টাকা আছে―স্ট‍্যাটাস ইত‍্যাদি ।
কুড়ি বছরের মেয়ে রাজী হলো চল্লিশ বছরের আধবুড়োকে বিয়ে করতে ।
সে কলেজে পড়ছিলো―
নিজের লেখাপড়া গেলো চুলোয় ।
তবে বরুণ মেয়েটিকে আশ্বাস দিয়েছে যে সে যতদূর খুশি পড়তে পারে ।
ভালোবেসে নয়―ভেবেছিলো লেখাপড়া শিখে চাকরি করলে ঘরে টাকা আনবে ।
বিয়েটা বরুণের হয়েই গেলো ।
কেউ গোপনে বললো, মেয়েটার কী রুচি রে বাবা ! মেয়ে এত সুন্দরী আর বিয়ে করলো এক আধবুড়োকে । ছি: ।
কেউ আবার প্রকাশ‍্যে বললো,
সুপারব কাপল, ম‍্যাড ফর ইচ আদার ।
অবশ‍্য কথার খিলাফ করেনি বরুণ । বিয়ের পর পড়াশোনা থামেনি মেয়েটির ।
কলেজ পেরিয়ে ইউনাভির্সিটি ।
এইবার শুরু হলো তার এক বৈপরীত‍্য জীবন ।
জানি না কোন চৈতী বা ফাগুনী হাওয়ায় উড়ে গেল তার মন ।
ভালো লেগে গেলো একটি ছেলেকে ।
এতদিনে মেয়েটি বুঝলো, এই আধবুড়ো বরুণ তার উপযুক্ত নয় ।
সম্পর্ক চলে গেল অবাধে গভীর থেকে আরও গভীরে ।
একদিন বরুণ দেখলো, এক অজ্ঞাত ছেলে তার বউয়ের সঙ্গে ঢলাঢলি করছে।
আর একদিন বরুণ দেখলো, সেই অজ্ঞাত ছেলেটির ঠৌঁট মুছে দিচ্ছে তার বউয়ের লিপস্টিক ।
অন‍্য আর একদিন বরুণ দেখলো, সেই অজ্ঞাত ছেলেটি খুলে ফেলছে তার বউয়ের শাড়ী ।
এতদিন বরুণ চুপ ছিলো এইভেবে যে সে তার ফুটন্ত যৌবনে
এরকম কত মেয়েরই না আলগা কাপড় ছিঁড়ে ফেলেছে,
আজ তার বউয়ের শাড়ী খুলছে তারই মতো এক লম্পট ছেলে ।
কিন্তু তার পৌরুষত্ত্ব চুপ করে রইল না ।
পৌরুষত্ত্বের অস্তিত্ত্ব রক্ষা করতে গর্জে উঠল―চড় চাপড় পড়লো মেয়েটির পিঠে,
দিকে দিকে রটে গেলো মেয়েটির অপবাদ ।
এই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করলো আদালত―
….যদি দং …..তদি দং…বিচ্ছেদ ।
বরুণ আবার বিয়ে করলো । পৌরুষত্ত্বের পরীক্ষায় সে উত্তীর্ণ।
মেয়েটির খবর জানি না….
এখন তার বাপের বাড়ীতে ঠাঁই নাই
গ্রামের লোকে ছি: থু: করে…..
যে ছেলেটির সাথে প্রণয়লীলা জমিয়েছিল তার বাড়ীতেও না।
মেয়েটির আর কোনো খবর পাই না
মুখ ফোলানো হাসিতে লোকে বলাবলি করে, মেয়েটি শেয়ার বাজারে চলে গেছে ।
যদিও আমি তা বিশ্বাস করি না ।


          ’’’’’’’’’’’’’’’’’’’’’’’’’’