কাঁদিয়া কাঁদিয়া ফিরে পথে পথে অভাগিনী
বুকে লয়ে অসহ বেদনাভার দিবস-রজনী ।
দুঃখের পান্থশালায় কাটে তার বিনিদ্র শর্বরী
নয়নে ঝরে অবিরত শোণসম অশ্রুত বারি ।
ক্লান্ত শরীরে অক্লান্ত পরিশ্রমে করিয়া বরন
চরন মাগে না বিদায় হইতে তপ্ত বালুর দহন ।
দেহে নাহি তার বসন-ভূষনের সৌন্দর্য্য,
অশ্রুসিক্ত নয়নে ঝলসে অফুরন্ত শক্তি-ধৈর্য্য ।
তার ক্রন্দনরোলে প্লাবিত ভূর্লোকে
বাজে না বেদন কাহারও পাষান বুকে ।
কত নগর-পল্লীর প্রান্তর,দুর্গম পথ, গহন কান্তার
করজোড়ে স্মরন মাগে তার দুর্দম যাত্রার ।
বুকে লয়ে ক্ষুধা-তৃষ্ণার জ্বালা,করে নাই বালা,
কপোলে নাই বিজয় চন্দন,কণ্ঠে নাই বিজয়মালা ।
তবু যায় সে ফিরাইতে আপন সন্তানে
যে বশীভূত তামসঘন মোহময় বয়ানে ।
শুনিয়া সন্তানের নরকে হয়েছে ধাম
ভূলিয়াছে মানব জীবনের জপনাম ।
থরোথরো কাঁপিয়া উঠেছে মাতৃসত্তা
হইয়া দিশেহারা অভাগিনী ছুটে চলে সেথা----
যেথা ভাঁটিশালা,যেথা ভন্ডপ্রেমের নাট্যশালা,
যেথা চোর-ডাকাত-খুনীদের কসাইশালা ।
যেথা মানুষের চিত্ত হারিয়ে প্রেমভক্তির জীবন
করিয়াছে লোভের মায়ায় শয়ন ।
সকাল-সাঁজে ধ্বনে যেথা অমধুর সংগীত,
মিথ্যের কোপে সত্য যেথা হয় ভয়ভীত ।
আজ তারে তাই দেখিতে হয় যা ছিল অলক্ষ্য,
আঁচলে ঢাকিয়া মুখ গোপনে লুকায়েছে নিজ দুঃখ।
শুধু নিরাশার কালো মেঘে ভরিয়া তার গগন
নীরবে উষ্ণ সলিল ধারায় প্লাবিত করেছে দু'নয়ন।
দেখিল সেথা অগণিত সন্তানের জমায়েত
যারা হারিয়েছে মাতৃঅঞ্চলে ফিরিবার পথ ।
যুগের শাপিত চিত্তে ব্যর্থ তার উপদেশ বোল,
বিনিময়ে উপহাস বাক্য বরিষনে পূর্ন তার কোল।
আজ কে বুঝিবে তারে,সে যে চিরদুঃখিনী,
বিশ্বভূবন মাঝারে সকল সন্তানের জননী ।
_________