আমি এই সভ্যতাকে দেখেছি
মাটির কাছাকাছি।ধূলো ভরা রাজপথে।
পোকা-লাগা হলদে পাতায়। কালো মেঘের
পাগড়ি পরিহিত সুসভ্য মানুষে। মানুষের
হৃদয়ে স্থাপিত নগরায়নে।
আমি এই সভ্যতাকে দেখেছি
মাটির তলায় জীবাশ্ম মুড়ি দিয়ে শুয়ে
থাকতে। কচ্ছপের খোলার উপর পিঁপড়ের
মতো হামাগুড়ি দিতে। ঝড়ের দোলায়
নরম গাছের মতো নুয়ে যেতে।
আমি এই সভ্যতাকে দেখেছি
ভাঙা আয়নার প্রতিবিম্বে। ঘুন ধরে
যাওয়া মূল্যবান মানচিত্রে। মাদকাসক্ত
নষ্ট সমাজের নগ্ন পদযুগলে পিষ্টিত
জীবনের মূল্যবোধে।
আমি এই সভ্যতাকে দেখেছি
ভন্ড প্রেমিক-প্রেমিকার জঘন্য
প্রেমাচারে। মার্কেটিং দুনিয়ায়
লোভ-লালসা-হিংসার কার্তুজে জমে থাকা
বারুদের গন্ধে। রক্তে ভেজা হাহাকারে।
ব্যভিচারের আরাধ্যস্থানে।
আমি এই সভ্যতাকে দেখেছি
সন্তান দ্বারা অবহেলিত অসহায়
পিতা-মাতার অস্ত যাওয়া চোখের কোণে।
আবার, পিতা-মাতার বিচ্ছেদ ক্ষুধার
ঘ্রাণে জঠোরে বেড়ে ওঠা শিশুর ভয়ে।
আমি এই সভ্যতাকে দেখেছি
ট্রাফিক জামে, ঝলসানো রোদে ঘর্মাক্ত দেহে।
একবিংশ শতাব্দীর অঙ্গুলি হেলনে
অগভীর নদীতে অকালে ডুবে যেতে।
পার্ক, হোটেল, ক্লাবে যুবক-যুবতীদের
উল্লাসের রঙ্গমঞ্চে।
আমি এই সভ্যতাকে দেখেছি
পাঁচটি মানুষের পরিবারে পাঁচটি হাঁড়িতে।
ফ্ল্যাটে বেড়ে ওঠা টবের তুলসী গাছে।
কংক্রিট দেওয়ালের চাকচিক্যের
অহংকারে। অন্ধ-ভীত প্রজার নত মস্তকে।
অনেক দেখেছি অনেক শুনেছি
দেখতে দেখতে শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত
দু-চোখ মেলে তাকাতে পারি না
দু-কান হয়ে গেছে বধির।
এখন আর ইস্পাতে ইস্পাতে ঘর্ষনে যন্ত্রনা হয় না।
আমি জানি আমার এই জড়তার হবে অবসান।
তুমি আসবে । আসবেই।
শুধু আমার জন্যই আসবে।নিয়ে যাবে শান্তিপুরীতে।
এই সভ্যতার গন্ডী থেকে দূরে….বহু দূরে।
এসে বলবে,‛চোখ মেলে চেয়ে দেখো, এই তো আমি এসেছি, তোমার সম্মুখে দাঁড়িয়ে।’
আমি জানি । হ্যাঁ, হ্যাঁ জানি। তুমিই সেই অনন্যা।
তোমার স্পর্শে আমার বুক হয়ে উঠবে শীতল সরোবর।
ফুটবে পদ্ম। তোমার রশ্মির সবকটি কিরণ শুষে নেব
আমার পাঁপড়িতে। গোধূলির আলতা পায়ে বিকেল
মিলিয়ে যাবে দূর দিগন্তে। বিকেলের আলো ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পড়বে কুমিরের মতো নদীর বালুচরে।
শুধু আমরা দু’জন থাকবো পথে
থাকবে তোমার দু-হাত আমার দু-হাতে।
*************