আমরা;
পড়ে আছি আলু পেঁয়াজ রসুনের মতো
স‍রকারি গুদামে,ভিনরাজ‍্যে।
ভ‍্যাপসা গরমে পুড়ে যাচ্ছে গায়ের চামড়া।
বেঁচে আছি দু-বেলা আলু সেদ্ধ ফ‍্যান ভাত খেয়ে।
দিনের পর দিন লবনাক্ত খিচুড়ি
খেয়ে জ্বলে যাচ্ছে উদরের নাড়ি-ভুঁড়ি।
আমরা কেউই এখানে বেড়াতে বা ব‍্যবসা করতে
বা পড়াশোনা করে ব…ব...বড়ো মানুষ হতে আসিনি।
কেউ এসেছিলাম পেটের জ্বালায় কাজ করতে
কেউ চিকিৎসা করাতে
কেউ বা অন‍্য কোনো কাজে।
আমরা গরীব, সংখ‍্যায় অগণিত
এক কথায় যাকে বলে ‛ডিসগাইজড আনএম্পলয়িজ’।
আমাদের মতো লক্ষ মরে গেলে
দেশের কিছু যায় আসে না।
আমরা করোনা কবলিত রেড জোন এলাকায় আছি
তাই আমরা সুস্থ হলেও করোনা আক্রান্ত ।
তাই তো আমাদের দেশে ফেরাতে পৌঁছায়নি গাড়ী
কিন্তু যখন রোগগ্রস্থ কোটিপতিরা বিদেশ থেকে এলো
তখন বন্ধ করা হয়নি বিমান।
তবু দু-চোখ জানলার দিকে চেয়ে দেখে
শহরের নিস্তব্ধতা ভেঙে কোনো ট্রেন এলো কিনা।
যারা ঠান্ডা ঘরে বসে বলছেন,‛যারা যেখানে আছেন
তারা সেখানেই থাকুন।’
তারা একবার এসে দেখে যাক করোনার মতো হাজারটা জীবাণু কীভাবে আমাদের জীবনরস চুষছে।

অহংকারী মানুষের গড়া সাধের পৃথিবী আজ
কুপোকাত এক অণুবীক্ষনিক জীবাণুর ভয়ে
যেভাবে বেজির ভয়ে নৃত‍্যরত সাপ
নিজেকে গুটিয়ে নেয় গর্তের ভিতরে।
এখন ইচ্ছে করে করোনার সাথে মিত্রতা করি
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আমাদের পেটে
জমে থাকা আলু সেদ্ধ ভাতের প্রতিশোধ নিই
আমাদের লাঞ্ছনা,অবমাননার প্রতিশোধ নিই।
যতই নৃশংস হোক তবু…না…না……না…
ভাববো না। ভাববো না। ভাববো না।
ভালো মন্দ আমরা কিছুই বুঝবো না।
যখন অনাহার অপুষ্টিতে আমাদের বুকের
পাঁজর দেখা যায়
যখন আমাদের মেয়ে কাজ করতে গিয়ে তথাকথিত
সভ‍্য বাবুদের বাড়ীতে ধর্ষিতা হয়ে ফিরে আসে।
পরদিন খবরের কাগজে মর্মবেদনার পরিবর্তে ছাপা হয়
ধর্ষনের পুঙ্খানিপুঙ্খ বর্ণনা…..কীভাবে প‍্যান্ট খোলা হয়েছিল ? কীভাবে ব্লাউজ ছিঁড়ে ফেলেছিল বা
ছিঁড়ে ফেলেছিল কিনা ?
তখন আমাদের চোখের কোণের কালো দাগ
দেখতে তো কেউ আসে না।
ক’জন ধর্ষিতার জন‍্য রাস্তায় মোমবাতি মিছিল বের হয়?
আজ আমরাই বা শুনবো কেন ?
অনেক করেছি–
বুকের রক্ত ঢেলে নেতাকে বাঁচিয়েছি
স্বাধীনতা এনেছি। বিনিময়ে কী পেয়েছি ?
কিচ্ছু না।
আজ আর কোনো ছলনায় ভূলবো না।
প্রতিশোধ নেবার সময় এসেছে।
আমাদের শরীরে করোনা নিয়ে ছড়িয়ে পড়ব
গ্রামে-গঞ্জে, শহরে, অলিতে-গলিতে‌।
গুঁতিয়ে ভেঙে ফেলব কাঁচের দেওয়ালের কোয়ারেন্টাইন।
হয়তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে মানবজাতি।
হোক!তাতে ক্ষতি নেই।
তবু এই অমানুষদের মানুষের দেহ নিয়ে
পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।
ইতিহাস সাক্ষী আমাদের মৃতদেহের উপর বিপ্লব এসেছে
কিন্তু এ বিপ্লবে নিয়ম পাল্টে গেছে, এখানে আমরা একা মরবো না। আমরা মেরে মরবো।

          ***********