অগ্নি দহনে পুড়ছে দেহ
প্রতিটি লোমকুপ আঁধার অরণ্য;
শীত এসে গেছে তবুও দেখা নেই পরিযায়ী পাখিদের
যে লেকের পাড়ে আমি প্রায়শই বসি
তার রূপ দেখি বারোমাস শব্দ শুনি
পাতায় পাতায় কানাকানি ফিসফাস,
আমি সবচেয়ে বেশি চিনি তারে, কাজল পাখি
শীত এলেই বেড়েযায় শিকারী মানুষের ভ্রমণবিলাস;
মাকড়শার গৃহে ঝুল হয় নিশাজলের স্ফটিক বেদনা,
বিরান বৃক্ষের শাখাগুলো গায় পাতা ঝড়ার সুর
এমন খোল পাল্টানো কষ্ট তবুও নিশ্চুপ;
গাছ মানুষের মতো কথা বলে না।
পাখিকে, গাছকে, অরণ্যকে প্রতিকুলেই বাঁচতে হয়
তাদের সুরক্ষায় নেই কোনো অলিক হাত,
নিরীহ অজরে মানুষের যত আক্রোশ
তবুও বন-অটবী চিরদিনই করে গেছে মানুষের কল্যাণ।
শীতের রাতে গৃহহীন মানুষেরা কাঁপে নির্ভীক
ক্ষুধার্ত ঠোটগুলো চেটেপুটে খেতে চায় ভেজলিন
সকালের তির্যক রোদে শিশুদের ফাটা ঠোঁট অমলিন হাসে;
সকল নিঃস্ব মানুষের চিরদিনই থাকে পৃথক শ্লোগান
মেশে না বিত্ত-বৈভব মানুষের সাথে।
অগ্নি দহনে পুড়ে যায় দেহ
শুক্লাবিহীন চারিপাশ সহজ সম্ভোগ মোহ
হাতছানিতে হই না অবাক,
পাশকেটে শুধু বলি—
আবার আসিব।
যখন শীত এসে যায়; আমার প্রস্থান আরো কাছে আসে
বন-অরণ্যের মতো বেঁচে থাকার ইচ্ছোটা মানুষের প্রবল
গাছ-প্রকৃতি বেঁচে থাকতে পারে!
যতদিন মানুষেরা ক্ষেপে না বৈরিতায়।
বৃক্ষরা খোল পাল্টালেও আমি পাই না দুঃখ;
শীতের শেষে ন্যাড়া শাখায় আবারো গজায় সবুজপাতা
বিজন বনের বেড়ে যায় পুনশ্চ আয়ুষ্কাল
অথচ মানুষ পারে না বয়সের অধিক বাঁচতে,
খোলস পাল্টাতে, নিজেদের দেহকে অরণ্য বানাতে।
শীত এসে গেছে
তবুও অগ্নি দহনে পুড়ছে দেহ;
আমার কোনো প্রতিহিংসা নেই
দেহের উত্তাপ শেষ করি সবুজ সম্মোহে;
আমি হুইসেল দেই, শীষ দেই,
প্রতিধ্বনি শুনি অরণ্য আলোড়নে,
অমোঘ হেটে যাই গন্তব্যহীন পরিযায়ী পায়ে।
২৫ অক্টোবর ২০২১, শঙ্কর, ঢাকা।