এ শহর কখনো কী নিয়েছে তোকে আপন করে?
এ শহর প্রেম ছাড়া সবই বিকিকিনি করে!
সুপ্রভাত শহরের ভোর, পাঁজরের কান্না
লেকের জল কেবলই খেলা করে,
এ শহর ভুলো মন পাশ কেটে গেলে
সমুখের অবয়ব হাত নাহি ধরে।
এ শহরের রোদ পিপাশার চেয়ে ক্রোধ
কাকের সভ্যতা অনিয়মের চেয়ে দামি,
মানুষেরা নিষ্ঠীব অসভ্যতার ক্লেদ ঢেলে
উন্মত্ততায় মেরে ফেলে মিত্র মাতনী কুকুর।
এ শহর মানুষের ভিড়ে মায়াহীন মনগুলো পরা মুখোশ।
এ শহর তোকে চকিত বিস্ময়ে দেবে চোখের হাসি
পার্কের বেঞ্চির দুই ধারে যেন অচেনা অভিবাসী,
এ শহরে কোথাও নিমগ্নে কোনো নির্জনে
বুকের ব্যথায় কেউ মরে গেলে—
পয়মন্ত পরম স্বঘোষিত বন্ধু পালিয়ে যায় চুপিসারে।
এ শহরের বেলুন বাতাসকে দুই ভাগ করে;
শিশুর হাত আশাহীন; উপহাসে সেই বেলুন ওড়ে,
ফুটপাতের হাওয়াই মিঠাই অভিমানের ঠোঁট লাল করে।
দামি গাড়ি, ফ্লাট বাড়ির কথা না হলে স্বপ্ন দেখে না;
দু হাত ছেড়ে দিয়ে চির বিদায় বলে।
এ শহরের আতশবাজি চিরদিনই থাকে কারো দখলে।
নীপ থোকা খুলে হাসে পথ শিশুর হাত—
মায়াবী দুটি চোখ ফ্যালফ্যাল খোয়ারি
এ শহরের মানচিত্র ভাসে বিকেল রোদে নরম তুলতুলে গালে
এ শহরের নিষ্ঠুর বিধাতা, কখনো কী হয়েছে বিনয়ী?
এ শহরের বুক কাঁপায় গাড়ির হর্ন অবিরত
অভিমানে কেঁদে ওঠে নির্মোহ পার্ক অটবি।
এ শহরের সুখ কাঁদে উদাসীন; শাহাবাগে ফুলের দোকানে
অচেনা সব মুখ তবুও নেকাবে পথচলে ভ্রান্তি আবরণে।
এ শহর কতটা একা হাজার যুগ ধরে!
বিমূর্ত গাছের আড়ালে তৈষী রাতের পাখিরা কতো কানাকানি,
রাত জাগে চলমান ছায়ারা, ল্যাম্পপোস্ট তার সাথে সখ্য-বিরহ যত।
এ শহর তোকে হারালে হারাবে না বসতি!
এ শহর তোকে ভুলে গেলে; কী তাতে দালানকোঠার ক্ষতি?
এ শহরের বাঁকা চাঁদ প্রেমবিনে হয় যৌবনবতী
জ্যোৎস্নায় দাঁড়িয়ে থাকা নগ্ন পিলার ভাঙে বুক,
এ শহর শুক্লাকে ভুল পথ দেখায় ততোধিক;
এ শহর চিরদিনই খোঁজে আনকোরা নাগরী।
এ শহর খুব বেশি বোঝে না মানবজীবন
সন্ন্যাস মন নিয়ে কোথায় দাঁড়াবি?
এ শহর খুব বেশি দুঃখ দিলে—
চিলেকোঠা ছাড়া কোথায় লুকাবি?