মুহুর্তের বিরামেও বোধ হয়নি সত্যিই কি তুমি নেই ? আমি কি তোমাকে ছাড়াই ?
বসেছিলেম ইজেল ঘরে, হ্যাঁ আমি বলি ইজেল ঘর - আমার আঁকিবুকি কাটার ঘর। কালো ঘন মেঘ উড়িয়ে নিয়ে গেছিল ভারি বাতাস আর সেই এক পশলা ভারি হাওয়ার ঝাঁক রিনিরিনিয়ে-ঝিনঝিনিয়ে উত্তরের পর্দার হেলানি-দুলানি ইশারায় বলে, আমি শুধু আমিই, কি করে হয় তুমি আমি বিনে ?
দক্ষিণাপনের বাতাস এসেছিল উত্তরের পর্দার ফাঁক গলে, বলেছিল ভাল আছো ভদ্রলোক?
বুক ঠুকে মুখ ঢেকে তাল রেখে বলি - আমি থাকি তোমাতে নীরবে-সরবে, তাপে-উত্তাপে, জাঁকে-জমকে…. হাসি-কান্নায় দমকে-গমকে। তোমার তালে তাল মিলিয়ে পা দুলিয়ে বাঁকের পাড়ের জলে পানকৌড়ির চানবেলার দুষ্টুমির ফাঁকে বেশ আছি। অবসরে কাটে ইজেল ঘরের বিছানো তোমার লাল কার্পেটে। আর কি চাই !!
ইজেল ঘরে বসেই কেটেছে আজ সারাটা বেলা। আঁকিবুকিতে ভরে উঠেছিলে ইজেল ঘরের তুমি। এযেন খেলা ভাঙার খেলা! ভেঙেও ভাঙতেই চায় না।
সকাল গড়িয়ে বিকেল। পারুর মা'র কাজে আসার সময় হয়েছিল টেরই পাইনি আমি। সময় থমকে ছিল তোমাতে পাগলা ভারি হাওয়ায়। ইজেল ঘরের পশ্চিমের কোনার জানালা একরাশ লাল সূর্যের ডাক ছড়িয়ে দিয়েছিল ঘরে। পুরো ঘরে আলো না হলেও আলো-আঁধারির খেলায় তৈরি করেছিল অলৌকিক মোহময় ভাব। চারিপাশে ঘন কালো আঁধার ছাপিয়ে আলোর বন্যা বইয়ে দিয়েছিল লাল সূয্যির সোনাগলা রঙের উত্তাপ। শরীরি তাপ-উত্তাপ বোধ হারিয়ে গেলে নির্ভর করতে হয় অন্য তাপের ওপর। নিম্নাংশের শিরশিরে স্রোতের ব্যাথাটা চাগাড় দিলেও মাথা চাড়া দেয় নি। ছাড়িয়ে যায় নি সহ্যের সীমা। অবশ্য আজকাল শরীরের সহ্য শক্তি অন্য মাত্রায় দাড়িয়ে থাকে।
দাদামনি, ডাকটায় চেতনা ফেরে ইজেল ঘরের। ঘরের আলো জ্বেলে পারুর মা বলে, বিবলি কোথায় গেল?
হুড়পাড়িয়ে উঠে দৌড় দিই স্কুলের দিকে। বাড়ি ও স্কুলের মাঝে চেতনায় অন্যকিছুর প্রবেশ নেই। বাড়ি পেরিয়ে রাস্তা পেরিয়ে গাড়ি পেরিয়ে হাঁফাতে-হাঁফাতে স্কুলে পৌঁছে দেখি বিবলি গেটের গায় হাত ধরে ঠায় দাড়িয়ে, চারিপাশে কোথ্বাও কেউ নেই!
বিষন্নতা কাটিয়ে পাড়ি দিই ঘটমান বর্তমানে যেখানে কোনোও বাতাস ভারি নয়, কোনোও আলোও কালোও নয়। আসলে বিবলির সামনে এলেই শুধুই আমি, শুধু আমিই হয়েছি তোমাতে। বিবলিকে ছুট্টে কোলে তুলি, একগাল চুমো খেয়ে পাড়ি দিই তোমার ইজেল ঘরে।