১) সাঙ্ঘাতিক
আর যেখানেই ধাপড়ে বেড়াও হে সুকুমার রায় ,
লালগোলার সেই ‘আগ্রহী’- তে পা রেখোনা ভাই ।
সেই গোষ্ঠীতে সবাই রসিক তোমার দেখা পেলেই
জাপটে ধরবে যে কেউ তোমায় , কিম্বা , সবাই মিলেই ।
আর তুমি যা হাসির রাজা সদাই থাকো খুশি
তোমার পিঠেই সাধন দাদুর পড়বে প্রথম ঘুষি !
কারণ সে তো নাটক পাগল উসকে তোমায় দিয়ে
পড়বে শুয়ে পেট ফুলিয়ে মঞ্চে নিজেই গিয়ে ।
অবনীদাও আজব মানুষ তোমায় ডেকে ‘ বগা !
কেমন আছিস ?’ এই বলে সে ধরবে নাকের ডগা ।
গান যদি তার নাই শুনো গো একমনে কান পেতে
কানমলা কি সইতে পারবে ? তাও যদি খাও রেতে ?
দিতেও পারে কামড়ে তোমায় সেই বুড়োটা ঘাড়ে !
জানবে তখন লোকটা কেমন চিনবে হাড়ে হাড়ে ।
সে গোষ্ঠীরই আরেকজনা জয়বাবুকে চেনো ?
লোকটা ভূতের গল্প গড়ে , সেও ভুতুড়ে ! জেনো ।
ফাটাফাটি গল্প তোমায় যেই শুনিয়ে দেবে
পাবেনাকো তোমার মনে কিছুই তুমি ভেবে ।
ওর মতো নয় শান্তশিষ্ট তাই বলে সেই পাল...
মাধববাবু একটু কিন্তু অন্য ধাঁচের মাল ।
বাকবিতণ্ডায় তুমি ওনায় পারবে নাকো লড়ে ,
ইস্কুলে সে চাকরি করে থাপড়ে দেবে ধরে ।
তোমার নাকে ঢোকাবে সে সুতোয় পোকা বেঁধে !
হাজারখানা হাচ্চি তুলেও পার পাবেনা কেঁদে ।
ছোটুর কথা বলব কি আর পুঁচকে সেতো মেয়ে
তবু তারও পেতে অনেক রঙিন কথা ছেয়ে ।
হাসির ছড়া পাঠ করে সে শুনিয়ে এমন দেবে ...
নাম যে তোমার রায় সুকুমার তুমিও ভুলে যাবে ।
তোমার নামের মুণ্ডু ধরেই আছে আরেক কবি
তার প্যাঁদানি খেলে তোমার বদলে যাবে ছবি-ই !
সম্পাদক সে ‘ভালোমন্দ’-র মাথায় একটু বেঁটে ,
ঢালবে যে সে তোমার মাথায় তোমারই ঘোল ঘেঁটে ।
গণ্যমান্য বিশিষ্ট লোক , হাত যা লম্বা তারই
তোমায় কোথায় ছেপে দেবে কেউ পাবেনা টের-ই !
এত কিছু শোনার পরেও ‘আগ্রহী’- তে গেলে
জানবে তুমি কেমন আমি অদ্ভুতুড়ে ছেলে ?
সে গোষ্ঠীরই ছোকরা আমিও ভীষণ সাঙ্ঘাতিক
তোমার হাসির মন্ত্র হেঁকেই করব তোমায় ঠিক ।
আর কারো নয় তোমার সৃষ্টি ‘আবোল তাবোল’ পড়ে
তোমারই পেট গোল গড়াবো হাসির হাওয়া ভরে ।
ছড়িয়ে নেই নাম যদিও আমার দিগ্বিদিক
বলবে তুমি আমায় তবু ‘আজব সাহিত্যিক !’
২) ভালো আছি
স্বপ্নঘুড়ি উড়িয়ে আমার
ভাবনার নীলাকাশে ,
গেয়ে চলি গান এই জীবনের
চলমান দূরভাষে ।
হচ্ছে যা সব দেখছি কোথাও
শুনছি কারোর মুখে,
চিনছি মানুষ , জানছি কিছু
কাগজের ঘ্রাণ শুঁকে।
কান্নায় কভু ভাসছি দুখে
চক্ষুনদীর বানে
হাসছি কোথাও ছিটেফোঁটা সুখ
কুড়িয়ে পেয়ে প্রাণে ।
খাচ্ছি-দাচ্ছি, হেলছি দুলছি
চলছি তো ঠিক পথে,
বদল হওয়া বারো মাসের
আবহাওয়ার সাথে।
দেখছি তো রোজ ধ্বংস কিছু
কিছু সৃষ্টির আলো ,
লড়াই করে চলছে জীবন
এই আছি বেশ ভালো ।
৩) ভোটের খবর
বিধানসভা ভোটের খবর
বলছি শোনো বাপ, –
রোদের সাথে পাল্লা দিয়ে
বাড়ছে ভোটের তাপ ।
সারাবাংলার জেলায় জেলায়
হয়েছে ভোট শুরু,
বুথে বুথে চলছে হামলা
বুকটা দুরু দুরু ।
কখন কোথায় বোমা পড়ে
হয় মানুষের বলি ,
ভোটের সময় তাইতো বাপু
পা টিপে পথ চলি ।
কখন কে ঠ্যাং খোঁড়া করে
নাম করিনা কারো ...
কাজের বেলায় লবডঙ্কা
ভাষণে সব বড় ।
৪) অমর স্বপ্ন
স্বপ্নে এসে রবীন্দ্রনাথ
একটাই প্রশ্ন করেছিলেন
আমায় যেদিন ভোরে –
“ বড় হয়ে কি হবি তুই
ইচ্ছে কি তোর করে ?”
সেদিন বলেছিলাম তাঁকে –
“ ইচ্ছে আমার রবিঠাকুর
তোমার মত হবার
থাকতে চাই এ বিশ্বমাঝে
হৃদয় জুড়ে সবার।
করেও তুমি মৃত্যুবরণ
তোমার যেমন হয়নি মরণ,
বেঁচে আছো আজও তুমি
কথায় গানে সুরে ......
ঠিক সেরকম আমিও চাই
বাঁচতে জগৎ জুড়ে।
তুমি, যেমন করে আমার মনে
স্বপ্নে আসো ভেসে,
যাব, আমিও ঠিক তেমনি করেই
কারোর স্বপ্নদেশে। ”
সেদিন আমায় ......
উপহার দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ শুনে সেসব কথা,
ছোট্ট একটি সোনার কলম এবং একটি খাতা।
সেই স্বপ্নটি অমর হয়ে আজও আছে
মনের স্মৃতিঘরে,
যদিও আমি পাইনি সেই... সোনার কলম, খাতা
স্বপ্ন ভাঙার পরে !
৫) যৌবন
যৌবন আসে শৈশব এবং
বাল্য বিদায় করে ,
রঙবেরঙের পাপড়ি মেলে
প্রস্ফুটিত কিশোরকালের
হাতদুটিকে ধরে ।
যৌবন সবার চোখ খুলে দেয়
দেখায় কর্মদিশে ।
এই পৃথিবীর সকল দেশে
জোয়ানরা তাই চলে ভেসে
মহৎ কাজে মিশে ।
যৌবন আসে এই জীবনের
অনেকটা পথ চলতে ...
তর্ক , বিচার , বুদ্ধি নিয়ে
করতে লড়াই যুক্তি দিয়ে
অসীম তেজে জ্বলতে ।
যৌবন শেখায় বাসতে ভালো
কারোর প্রেমে পড়তে ,
দুইটি মনের তৃষ্ণা ক্ষুধাই
দুটি প্রাণের মিলন- সুধায়
জীবন সৃষ্টি করতে ।
৬) গ্রাম্যধুলি
আমার গ্রাম্যধুলির কণায়
বৈচিত্র জাল বুনে,
রূপকথাটির গায়ে লেগে
ছয়টি ঋতুই থাকে জেগে
প্রকৃতির গান শুনে।
আমার গ্রাম্যধুলির গন্ধে
ছন্দের কথা ভাসে,
তাইতো কবি কল্পনাতে
কাব্য লেখে চাঁদনি রাতে
নদীর তীরে বসে।
আমার গ্রাম্যধুলির কণা
রঙিন স্বপ্নে ভরা।
তাইতো আমি থাকি শুয়ে
জন্মভূমির স্বপ্নভুঁইয়ে
ধুলোয় পিটে গড়া।