অভিমানী বরষা
দেবপ্রসাদ জানা
২৯.০৭.২০২১

আর বেশদিন নেই বর্ষা,তোমাকে যেতেই হবে।
বড় কষ্ট দিয়েছ তুমি,জোর করে ঢুকে পড়েছ -
আমার ঘরে,আমার শুকনো শান্তির ঘরে,
চোখের জলে ভিজিয়ে দিয়েছো বিছানা।
ঘরের আসবাব পত্র।
দরজা বন্ধ করলে,
জানালায় দিয়ে ঢুকে যাচ্ছো।
বাইরে বের হলে,জড়িয়ে ধরছো অকারণে,
হালকা বাতাসে উড়িয়ে দিচ্ছো ছাতা,
কেন? বেশ তো ক্রোধে অভিমানে,
আমার সংসার ছেড়ে চলে গেলে,
তোমার সবুজ সবুজ সন্তানদের আমি-
দুই চোখে দেখতে পারি না,
আজ কেন এলে ফিরে?
দেখো, চেয়ে দেখো একবার,ওই সন্তানেরাই
আমার ভবিষ্যৎ, আমার বৃদ্ধ বয়সের সঞ্চয়।
তখন বলেছিলাম যেও না গো-
ভুলতো মানুষেরই হয়-
বড় বিপদে ফেলে পালিয়ে গেলে-
যখন আমার ঘরে, গ্রীষ্মের প্রখর উত্তাপ -
পড়িয়ে দিয়েছিল সব,
আমার শান্তি,আমার বসন্ত,আমার সুখের ঘর।
তখন কেন ভেবেছিলে আমি তোমার পর?
বড় জানতে ইচ্ছে করে, বুঝলে?
কেমন আছো তুমি? আমায় ছেড়ে,
ওই সাত সমুদ্রের ওপারে,মেরুর ওপরে-
পাহাড়িয়া গাঁয়ে,
চিরদিন তোমার ভালোবাসা পাবো ভেবেছিলাম।
আজ অজান্তেই কত ভুল বোঝাবুঝি মনে,
তুমি চলে গেলে অনেক দুরে-
আমায় ফেলে কেন কে জানে?
মনে পড়ে ফাগুনের গোধূলি বেলায়,
রক্তিম দিনগুলো,
পলাশ বকুল শিউলি ফুলের গন্ধে কতদিন
হারিয়ে গেছি নীল সমুদ্রের ওপরে হাতে গড়া
সবুজ ভেলায়, চেপে দুজনে।
কেমন আছো তুমি?
তোমার মুখখানা চোখে ভেসে ওঠে, প্রতিদিন,
আজ এসেছ চোখ ভরা অশ্রু নিয়ে,
শোনো বর্ষা আমি শিখে গেছি-
তোমাকে ছাড়া জীবনের সব পাঠ।
কেন তুমি অঝোরে কেঁদে কেঁদে -
আমার শান্তি সুখের আঙিনা ভাসাছো?
ও বুঝেছি, প্রতিশোধ নিচ্ছো?
আজ প্রকৃতির সঙ্গে আমি ভালো আছি,
তোমার প্রিয় বোনের সংসারে-
তোমার মনের বিষ ঢেলে দিচ্ছো,
প্লাবনে,প্লাবনে,বন্যায় আমার সংসার ভাসিয়ে,
দিতে চাইছো।
দেখো,প্রকৃতি দেখো এই তোমার প্রিয় বোন বরষা।
হাসছো প্রকৃতি?
বরষার চোখের জলে বুঝি,তোমার হাসি পায়?
বুঝিনা বাবা তোমাদের এই রসায়ন।