কুম্ভকর্ণ



কুম্ভ অর্থাৎ কলসি,তার মতো কর্ণ।
রামায়ণে কুম্ভকর্ণ রক্ষকুলে বাস।
রাবণের ভ্রাতা তিনি,লঙ্কা পুরে স্বর্ণ।
বিরাট দানবাকৃৃতি দেহের প্রকাশ।

খাদ্যাভ্যাসে বাকটতা চরিত্রে সুদক্ষ।
রাম-রাবণের যুদ্ধে, অকালে মরণ।
শক্তি তার লক্ষ হস্তী,প্রদর্শনে যক্ষ।
পাঁচ গ্রামের খাবার,সে করে ভক্ষণ।

বিশ্রবা মুনির পুত্র,নিকষার ধন।
কুম্ভ ও নিকুম্ভ পুত্র আর ভীমাসুর।
বজ্রমালা পত্নী তার,পুত্র তিন জন।
রাবণের মধ্য ভ্রাতা, বিশাল অসুর।

বিভীষণ শান্তভ্রাতা ধর্মনিষ্ঠ ঢের।
বৈমাত্রেয় ভাই তার,রাক্ষস কুবের।



শূর্পণখা বোন তার,দারুণ সুন্দরী।
রামের সৌন্দর্যে মুগ্ধ,হলো অগ্রগামী।
বিয়ের প্রস্তাব তারে, দিলো যাদুগরী
রাম কহে শূর্পণখা,বিবাহিত আমি।

হে রাম এ বনে রবে, কতদিন আর।
সীতার অধিক আমি,অতি কান্তিমতী।
সীতা চেড়ে মোরে লয়ে,করহ সংসার।
রাক্ষসরাজ রাবণ, করিবে আরতি।

সীতা মোর সুরলোক,দ্যুলোক ভূ-লোক।
তার প্রতি কি কারণে, করি অনাচার।
সেযে মোর জ্ঞান বুদ্ধি,জীবন আলোক।
মোরে ছেড়ে লক্ষ্মণেরে,দাও মনিহার।

ঠাট্টার ছলে শ্রীরাম,কহিল হাসিয়া।
সেই কথা সত্যি ভেবে,গেল সে ছুটিয়া।



নাক কান কাটা গেল,লক্ষণের কাছে।
কাঁদিয়া কাঁদিয়া দুখি,গেল লঙ্কাপুরে।
রাবণে কহিল সব, ভেবে আগে পিছে।
রাবণের অপমান, কহে নাকি সুরে।

এতো গেল রামায়নে,যুদ্ধের কারণ।
তিনভাই রাবণের, মেজো কুম্ভকর্ণ।
ধার্মিক যে কুম্ভকর্ণ,অতি বিচক্ষন।
অজেয় ছিলেন তিনি,ভূবন বরেন্য।

স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্র,ঈর্ষা করে তাকে।
তিন ভ্রাতা মেলে করে,তপ একাসনে।
প্রজাপতি ব্রহ্মদেব, তুষ্ট হলো তাতে।
ইন্দ্রাসন চাই তার, এই ছিল মনে।

দেবরাজ ভয় পেয়ে করে অনুরোধ।
সরস্বতী দেবী তাই করিল বিরোধ।



আড়ষ্ট করিল জিহ্বা,সেই শুভক্ষণে।  
ইন্দ্রাসন না চেয়ে,সে চায় 'নিদ্রাসন'।
রাবণের অনুরোধে, ব্রহ্মার বিধানে-
ছয়মাস নিদ্রা যাবে,আশিস কেমন?

একদিন জেগে রবে,সেই মহীধর।
পাঁচটা গ্রামের খাদ্য,একা তিনি খান।
পর্বত সমান দেহ, অচল প্রস্তর।
দেবদৈত্য নরনারী,যা সামনে পান।

নিদ্রা অপূর্ণ হলেই,বেঘোরে মরণ।
এমন শাপের নাম,আর্শীবাদ যেনো।
নিদ্রাচ্ছন্ন কুম্ভকর্ণ, করে নিদ্রাসন।
কেমনে এমন তিনি,তাই বলি শোনো।

রসেবসে কুম্ভকর্ণ,শাপে এই হাল।
ভীষণ রাক্ষস হয়ে রবে চিরকাল।



পুরাণের মতে কুম্ভ, বৃহৎ আকারে।
বিষ্ণুর দ্বাররক্ষক,বিজয়াবতার৷
জয়,বিজয় ছিলেন,বৈকুণ্ঠেরদ্বারে।
শ্রীবিষ্ণুর পাহারায়,এলো অন্ধকার।

পবিত্র বৈকুণ্ঠদ্বার,রক্ষাকালে তারা
চতুর্কুমারের দ্বারা শাপ গ্রস্থ হন৷
অমর বর পেলেও শ্রীবিষ্ণুই সেরা।
বর স্খলন করিয়া,বিজয়কে কন।

বৈকুণ্ঠধামে আসার আজ্ঞা হলে পরে।
তবেই তারা বৈকন্ঠে আসিবে আবার।
মর্তলোকে তিনবার,বিষ্ণু অবতারে।
শত্রুপক্ষের শিবিরে,জন্ম হবে তার।

জন্মের দ্বিতীয় জন্মে তারা দুই জন।
শ্রীলঙ্কায় কুম্ভকর্ণ রাক্ষস রাবণ।



যুদ্ধক্ষেত্রে লঙ্কেশ্বর অপদস্ত হন।
কুম্ভকর্ণ ঘুমেমগ্ন ছয় মাস ধরে।
সময়ের আগে তারে কেমনে রাবণ?
জাগ্রত করিবে তারে,কে বলিতে পারে?

সহস্র হাতির দ্বারা ভাঙবে কি ঘুম?
ঢাক ঢোল কত বাদ্য তার কর্ণমূলে।
বাজিল সর্বদা সেথা,ভাঙে না যে ঘুম।
জ্যেষ্ট ভ্রাতা রাবণের ঘুম গেছে চলে।

রাবণের দুষ্কর্ম যে,মোটে ভালো নয়।
ধর্মপ্রাণ কুম্ভকর্ণ সেটাই বলিল।
ঘুম ভেঙ্গে কুম্ভকর্ণ করিল প্রলয়।
রামসেনা যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পলাইল।

ঘরশত্রু বিভীষণ রামের দোসর।
কেন বুঝিল না কুম্ভ,তার সহদর?