দুর্বাসার কাণ্ড
দেবপ্রসাদ জানা
১৫.৬.২০২২

মুদ্গল ঋষির কথা বলে বেদব্যাস।
বনবাসী পাণ্ডবেরা উপদেশ শোনে।
ধৈর্য্য রক্ষার বানীই কহে বেদব্যাস।
জ্যেষ্ঠ পাণ্ডবের মন রয় সেই পানে।

উঞ্ছবৃত্তি করে শিল, মহর্ষি মুদ্গল।
শস্যদানা জমি হতে করিয়া সংগ্রহ।
পাকা গম পাকা ধান জমিতে অচল।
কুড়াইয়া দিন তার  হয় অতিবাহ।

শিলোঞ্ছবৃত্তি করেন তবু খ্যাতি তার।
একদ্রোণ শস্য তিনি করেন সংগ্রহ।
পনের দিনের পর করেন আহার।
তার থেকে কিছু শস্য বিলোন প্রত্যহ।

অতিথি সৎকার করে পৌর্ণমাস যাগ।
কৃচ্ছতার মুল লক্ষ্য, রাগ রোষ ত্যাগ।



দেবদেবী গণ এলে,প্রসাদ পেতেন।
দেশব্যাপী খ্যাতি পেল,মহর্ষি মুদ্গল।
দেবরাজ ইন্দ্র এসে অতিথি হতেন।
চারিদিকে থেকে এল অতিথির দল।

আশ্চর্য ক্ষমতা এক পেলেন মুদ্গল।
যতই আসুক অতিথি,ফুরোয় না অন্ন।
শতাধিক অতিথিতে, করেনি দূর্বল।
তিতিক্ষা ও ঈর্ষামুক্ত জীবনের জন্য।

দুর্বাসা ঋষির কানে এলো যেই দিন।
ঈর্ষান্বিত হলো তিনি,সেই কথা শুনে।
তার থেকে নামি হবে? বড়ই কঠিন।
পাগলের মত হয়ে গেল সেইক্ষণে।

হুঙ্কার দিয়ে ডাকেন,হে মুদ্গল ঋষি।
অশিষ্ট দুর্বাসা ডাকে,দেখো দ্বারে আসি।



মুণ্ডিত মস্তক আর, কটূ কথা মুখে।
তীক্ষ্ণ কন্ঠে মুদ্গলেরে উপহাস করে।
কই তব দৈব্য অন্ন দাও খাবো সুখে।
ক্ষুধার্ত উন্মত্ত ঋষি, কার ধার ধারে?

স্বাগতম স্বাগতম কহেন মুদ্গল।
অভিবাদন লইয়া, হোন উপবিষ্ট।
অন্ন গ্রহণের পর যা ছিল সম্বল।
সব তার গায়ে মাখে যাছিল উচ্ছিষ্ট।

অভুক্ত মুদ্গল আর সব অতিথিরা।
অনাহারে দিনকাটে সকলের আজ।
এইভাবে পরপর অভুক্ত যে ফেরা।
দ্রোণশূন্য করে খান,এ কেমন কাজ।

প্রতিবার এই কাজ করেন দুর্বাসা।
মুদ্গল নিজের প্রতি,প্রবল ভরসা।



পনের দিন পরও থাকেন অভুক্ত।
তাতেও ধৈর্য্যহীনতা আসেনি যে তার।
শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে দুর্বাসা আরক্ত।
আরো বেশি বাড়ে তার,ক্রুর অত্যাচার।

অন্নগ্রহনের পথ বন্ধ করে ঋষি।
এইভাবে ছয়বার দ্রোণশূন্য করে।
অভুক্ত থেকেও ঋষি,সদা মুখে হাসি।
তা দেখে দুর্বাসারও অশ্রু চোখে ঝরে।

স্থিতধী মুদ্গল ঋষি,শান্ত ধৈর্য্যশীল।
অযথাই ঈর্ষাম্বিত হয়ে ছিনু আমি।
তুমি শ্রেষ্ঠ ঋষি দেশে,শান্ত অবলীল।
তব ধৈর্য্য,তব কৃচ্ছ সাধনায় নমি।

হে ঋষিশ্রেষ্ঠ মুদ্গল মানবের হিতে।
বৃথা চেষ্টা করিলাম,প্রতিশোধ নিতে।