এক সভায় আমিই ছিলাম বিচারক
'কে সেই বড় মানুষ' ? -- এই ছিল আলোচ্য বিষয়।
প্রথমে এলেন এক বীর যোদ্ধা --
‘সদা জাগ্রত সীমান্তের প্রহরী আমরা,
দেশের শত্রুকে সীমান্ত পার করে
আমরাই নতুন ভাবে সাজিয়েছি
আমাদের ভালবাসার ভাললাগার এই দেশ
আমাদের জন্মভূমি, আমাদের মাতৃভূমি।’
এরপর এলেন এক শিল্পী --
‘অন্যায় আর অত্যাচারে নিপীড়িত
মানুষের ধুসর জীবন কাহিনী,
তাদের সকল চাওয়া-পাওয়া
তাদের ভালবাসার গল্প,
তাদের ন্যায্য-অধিকার পাওয়ার গল্প
আমরাই আমাদের জীবন দিয়ে
অনুভবে আঙ্গিকে তোমাদের কাছে নিবেদন রাখি
সে কি তোমাদের বড় পাওয়া নয় !’
তারপর এলেন এক গায়ক --
‘সঙ্গীতের মূর্ছনায় ভাসিয়ে
সকল দু:খ-যন্ত্রনার বাতাবরণ ছিন্ন করে
নতুন করে বাঁচার আশ্বাস আর
প্রেরণালব্ধ অশনি সংকেতে
জীবনের জয়গান শুনিয়ে গেলেন।’
এবার এলেন এক কবি –
‘চিত্র অঙ্কনে তার জুড়ি মেলা ভার
তিনিই ফোটালেন আমাদের মুখের ভাষা
শেখালেন প্রেম-প্রীতি আর পবিত্রতা,
আমাদের শিক্ষা, আমাদের শৈশব-যৌবন-বার্ধক্য
মুক্তি সংগ্রামের প্রধান কারিগর
স্বপ্নের ফেরিওয়ালার সেই চিরন্তনী বার্তা।’
এলেন সন্ন্যাসীবরও –
‘যখন তোমার চিত্ত জেগেছে
তখনি হয়েছে সময়,
ওঠো জাগো নিজ লক্ষ্যে উপনীত হও
আমার হাত ধর, বাইরে এসো
ত্যাগের মন্ত্রে দিক্ষীত হও
ত্যাগেই পরমতৃপ্তি,
ত্যাগই মানুষকে মহান করে,
সেই সাধনায় নিজেকে বিলীন কর।’
সবশেষে এল এক সাধারণ মেয়ে –
‘যে নিজেকে বড় করে প্রেমকে রাখে নির্বাসনে
তাই তার স্বপ্ন কোনদিনই পূরণ হয় না।'
“ আর, তার পর ?
তারপরে আমার নোটেশাকটি মুড়োল,
স্বপ্ন আমার ফুরোল,
হায় রে সামান্য মেয়ে
হায় রে বিধাতার শক্তির অপব্যয়।”
শুনতে শুনতে আমার মনে পড়ল
এতো রবীঠাকুরের 'মালতীর' কথা .....
আমি আর থাকতে না পেরে
চিত্কার করে বলে উঠলাম
থামো, থামো এবার ......
ঘুম ভাঙ্গার অভিশাপ নিয়ে দেখি
আমার লেখার টেবিলে দোয়াতটি উল্টে পড়ে আছে
কালো অক্ষরগুলো ক্রমশ বিলীন হয়ে যাচ্ছে --
ভোরের আলো এসে পড়েছে জানালা দিয়ে
চেনা গলায় পাখিরা কিচিরমিচির করছে,
আমার আর কবিতা লেখা হলো না --
আর হলো না বলেই আমি কবি হতে পারলাম না,
তখনও অন্তরীক্ষে হেসে চলেছে অন্তর্যামী;
সবকিছুর সঠিক বিচার তিনিই
তিনিই সর্বশক্তিমান পুরুষ।
( সকল কবিকে আমার প্রণাম জানিয়ে কিছু কথা লিখলাম, জানিনা কবিতা হলো কিনা। আবৃত্তিকার - দেব )