এই পত্রটি আমার বাড়িতে কাজ করা এক রঙ মিস্ত্রীকে লেখা। যার কাছে এ চিঠি পাঠানোর উপায় নেই।
প্রিয় আহাসান চাচা,
রঙের ভিতর ডুবিয়ে দিয়ে গিয়েছিলে। সে আমার প্রথম বাড়ি করা, তাই  সেটাই প্রথম বাড়ি রঙ করা। কত বছর পার হয়ে গেল।   তোমার খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারলাম তুমি চলে গেছ।এত তাড়াতাড়ি এই রঙিন দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলে আঁধার কুড়াতে!
ভেবেছিলাম কলকাতা গেলে তোমার সাথে গল্প করব একদিন, যেমন গল্প করতাম অফিস থেকে ফিরে। তুমি বাড়ি থেকে যেতে আর এক মনে রঙ করতে আমি না ফিরে আসা পর্যন্ত।  ঘুরে ঘুরে দেখতাম তোমার রঙ করা।  তোমার রঙের যেমন হাত ছিল, তেমনি ছিল পালিশের হাত। যেমন তোমার হাত পালিশ করত কাঠের  আসবাব পত্র,  ঘরের মেঝে, রঙ করত দেওয়াল তেমনি তোমার মন পালিশ করতে পারত অন্যের মন, স্বচ্ছ করে দিতে আমাদের অন্তর দৃষ্টি। তোমার পরিশ্রমের ক্ষমতা। যেমন অবাক করত আমাকে, অবাক করে দিত  চিন্তা  ভাবনার স্বচ্ছতা ।
লক্ষ্মীপূজোর প্রসাদ চেয়ে বলেছিলে “ প্রসাদ   দাও মা!”
আমি জিগ্যেস  করেছিলাম “ চাচা তুমি কি জান আজ কিসের পূজো হল বাড়িতে?”
তুমি বলেছিলে “ কোন ঠাকুরের  জানি না, মা দিচ্ছেন খেতে আদর করে এই আমার তৃপ্তি । আমি এখন মাএর ছেলে আর কিছু জানি না !”
এই কথাতে এক শ্যামল রঙ ছড়িয়ে দিয়েছিলে, ঘরের সাথে মনে এক সুন্দর রঙ দিয়েছিলে আজও সে রঙ ম্লান হয় নি।  
আর সেই কথাটি।  জিগ্যেস করেছিলাম “আর কত বয়স পর্যন্ত রঙ করবে চাচা?”
কত সহজ উত্তর দিয়েছিলে “ আমার যে রঙ করতে ভাল লাগে তাঁর মতই। তিনি অনেক বড় তাই এ দুনিয়াতে রঙ ছড়িয়েছেন  সবার জন্য, আর আমি রঙ করি তোমাদের জন্য বাবু! তুমি যখন ঘুরে ঘুরে আমার করা রঙ দেখ আমার মন ভরে যায়।”

কাজকে কেউ এমন করে  ভালবাসতে পারে! তোমাকে দেখেই শিখেছি নিজেকে কি ভাবে উদ্দীপ্ত করা যায়!

এরকম কত কথা বলতে তুমি বসে বসে নিজের মনে। ভাবতাম তুমি রঙ মিস্ত্রী না ফকির!
চেয়েছিলাম আর একবার তোমার সাথে দু দণ্ড কাটাতে। তোমার সঙ্গ নিতে, তার আগেই তুমি চলে গেছ ঈশ্বরকে সঙ্গ দিতে।
তোমার সহজ কথাগুলো রঙে রঙে ছড়িয়ে আছে দেওয়ালে দেওয়ালে আসবাব পত্রে।   রঙ করতে শেখাও নি কিন্তু শিখিয়ে গেছ কিভাবে  রঙ দেখতে হয়! তাই আজও কত রঙ দেখতে পাই।
ইতি    
  ............

পুনঃ  
রঙ মিস্ত্রী না বলে রঙ শিল্পী বললে হয়ত ভাল হত। কিন্তু তাতে তার কাজের গুরুত্ব  তার বিনীত, সৎ, উদার, পরিশ্রমী চরিত্রটি হয়ত ঢাকা পড়ে যেত।তা ছাড়া আমার নিজের ত চিন্তার সীমাবদ্ধতা আছে। মিস্ত্রী আর শিল্পীর সীমারেখাটা জানি না যে!