কবিতার নাম -- ক্ষতির ক্ষতে দেবো না গোলাপ
কলমে -- দেবাশিস চৌধুরী
কথা দিলাম কোকিল কখনো কোনো দিন
জোর করে গাওয়াবো না অযাচিত কোনো গান
তোকে আমি,বসন্ত এলেও ফুলে ফুলে
যদি না সাজেও আর সাজানো ফুলের বাগান
তবুও বসন্ত ঋতুই তো সে - বসন্ত-আনা-কোকিল
লজ্জাবতীর লজ্জা-মেশানো আকাশে
অনেক যুগের অনেক পাথরের নীচে
চাপা পড়া কান্না যদি ঝড় হয়ে আসে
সে ঝড়েও কোকিল ছড়াতে রাজি আমি
প্রেমের নানা ভাষা সে বিক্ষোভ-বিক্ষুব্ধ ঝড়ের দুনিয়াতে
কোকিল,দেখেছি নিজের চোখে সত্য আর
সৌন্দর্য একসাথে পথ চলেনি বহু রাতে
হয়তো তাই সত্য কখনো নিষ্ঠুর,কখনো সুন্দর ---
তবুও স্বপ্ন আজ তার সমস্ত সম্ভাবনার
তীরে রেখে যাক অজস্র অগণিত আলোর আকাশ ---
ভয়ংকর গোপন দাঁত-নখে ভরা একটা গোলকধাঁধার
সর্পিল পথে হয়তো কবেই হারিয়ে গেছি আমরা -- কোকিল,তোমার সুরের,তোমার কোমল হৃদয়ের
কোমল পৃথিবী হয়তো তাই তোমার কাছ হতে আজই সেই দূরে
যতই থাকি ঘনিষ্ঠ স্বপ্নের কাছাকাছি,পাবো না ফিরে স্বপ্নের
সেই পৃথিবী আর হয়তো কখনো কোনোকালে
তবুও বেঁচে আমরা রয়েছি যতদিন যতকাল
প্রতিটি ফুলের কুঁড়ির আঁধারে গভীরে যেনো জাগ্রত থাকে
আলো ছড়ানোর শান্ত সুন্দর সৌম্য রৌদ্রজ্জ্বল সকাল
রোদে পোড়া বালি যুগ যুগ গড়ে মায়াময় মরুভূমি
যেখানে মরীচিকা মরুদ্যান কাছাকাছি পাশাপাশি
কত স্বপ্ন গড়ে আর ভাঙে ধূধূ করা বালির সাগরে ---
তবুও সমস্ত সদা পাশে থেকে ভালোবাসাবাসি
বেঁচে থেকে ভালোবাসার শক্ত মাটির পৃথিবীতে
মানবের সমস্ত দুর্যোগ দুর্ভোগ অসময়ে বিপর্যয়েও
তবু বেঁচে থাকে বহু জীবন বেঁচে থাকার মতো
কোনো জীবন এক তিল এক মুহূর্ত না পেয়েও
ঐ যে শ্রমিক দিনমজুরি করে,ওর আকাশে কতদিন ধরে
কত মেঘ জমে আছে,কতদিন দেখা দেয়নি কোনো তারা ---
হয়তো ও বসে আছে আঁধারে আড়ালে রাতের পর রাত
কোনো একটা তারার দেখা কোনোভাবে পেলেই ধ্রুবতারা
বানাবে তাকে -- ওই শ্রমিক চায় সেই জীবন নিয়েছে ছিনিয়ে
যে জীবন পুঁজিবাদ তার দুই স্বপ্নের চোখজোড়া হতে
বিপ্লব হয় শুধু অস্ত্র দিয়ে,বিপ্লব হয় শুধু পাথর দিয়ে, - বায়ু বয়,
দাবানলে অরণ্য জ্বলুক না জ্বলুক,শুধু বৃন্ত হতে ঝরলেই ফুল
ঝড় আসে উঠে আগুন ছড়াতে দিকে দিকে,ভেঙে দুই কুল
পৃথিবীর সব নদ নদীর বন্যা নামে ভাসিয়ে দিতে যা কিছু সঞ্চয়
অপেক্ষার রাত দীর্ঘ হয়,তবুও অপেক্ষা করে যারা তারা অস্থির
কই,হয় না তো -- চতুর্দিকে নিশ্বাস শুধু ভারী হয়ে আসে, রাত্রির
সন্তান যারা তারাও অসময়ে পায় না রাত্রির ক্ষমা বা করুনা
শ্রমিক,জীবনে যারা বিপ্লবী নয়, একটা প্রতিবিপ্লবী পৃথিবীর
তারাই তো বাধ্য সন্তান যুগে যুগে।
শ্রমিক,আকাশেও আগুন জ্বলে যখন দেখবে ঘন কালো মেঘ
আকাশের কোণে কোণে,-- শ্রমিক,তখন কি ভুলে সমস্ত আবেগ আর ভয় তুমি কি পারো হাতুড়ি ছুঁড়ে দিতে অসীম আকাশপানে
নাকি শ্রমিক যে পৃথিবী বারবার ফিরেছে শুধু পেটের ক্ষুধাটানে
তিল তিল শোষণের শোষিত অত্যাচারিত অভুক্ত পৃথিবীতে
প্রতিটি বিদ্রোহ শেষে,-সে পৃথিবীতে শ্রমিক হাতুড়িরা নিজেদের
সাথে নিজেরা যুদ্ধ করে ফিরেছে সেই ভাঙা বিচ্ছিন্ন হাতুড়িতে
শ্রমিক,ক্ষতির ক্ষতে গোলাপ দেবো না
কেননা যুগ যুগ গোলাপ শুধু প্রলাপই বকেছে
শ্রমিক,গোলাপ বহু রক্ত,বহু অস্ত্র থামিয়ে দিয়ে
একটা অভুক্ত অশক্ত অর্ধেক পৃথিবী গড়েছ