অনেকদিন আগে দেখা একটি নাটকের কথা মনে পড়ে গেল। বাসর ঘরে নতুন জামাইকে বারবার জিগ্যেস করা হচ্ছে , "ও জামাই গান পারো " ? জামাই মাথা নাড়ে। "তবে কি পারো" ? জামাই লজ্জা লজ্জা করে বলে , " আমি বাজাতে পারি "। সবার উত্সাহ চরমে , " কি বাজাও , বলোনা জামাই কি বাজাও " ! জামাই বলে, " আমি কাঁসর বাজাই। " শ্যালিকা রসিকতা করে কাঁসর আনতেই , জামাই প্রবল উত্সাহে বাসরে কাঁসর বাজাতে শুরু করলো। রসিকতা বোঝার ক্ষমতা সব জামাইয়ের থাকেনা , কিন্তু শ্যালিকার সামনে গুণপনা প্রকাশের ইচ্ছেটা সংক্রামক।
কবিতার আসরেও আজকাল কাঁসরের আওয়াজে কান ঝালাপালা।
আপনারা বলবেন , এত সংবেদনশীল কান যখন , তখন আসরে না পাতলেই হয়। মুরগীর ব্যবসা করবে আর শিয়াল আসবেনা , তা কি করে হয়। মানলাম , দুনিয়াটা আমার পছন্দ মতো চলবে না , চলার উচিতও নয়।
যদি কিছু বন্ধু জুট যায় , তবে আমি যাই (যা ইচ্ছে তাই = যাচ্ছেতাই ) লিখি , তুমি লিখবে ," অসামান্য লেখনী , হে প্রিয় লেখক। " আমি তোমার কবিতার পায়ের তলায় লিখবো, "গুরু করেছ কি ফাটিয়ে দিয়েছ, তো । "
তবে ভালো লেখারও রকম ফের আছে , আমার বোধ , বুদ্ধি , বিচার শক্তি যাকে ভালো ভাবছে , আপনার ক্ষেত্রে তা নাও হতে পারে। কিন্তু সেখানে সততা আছে। আসরটাই তো বাংলা কবিতার পূর্ণ চিত্র নয়। তাই ভালো খারাপ বিচার করার আগে সে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। একটা সহজ উপায় , আসরের বাইরের কবিতা বেশী করে পড়া, বোঝার চেষ্টা করা।
আমাকে পরীক্ষা পাস করতে , কুমুদ রঞ্জন মল্লিক , মানকুমারী বসু , কুসুমকুমারী দাসীর কবিতা মুখস্থ করতে হয়েছে , আমার কাছে ওনারাই বাংলা কবিতার শেষ কথা। এখন শখের খাতিরে ওনাদের মত করে কবিতা লিখে ভাবলাম কি না কি লিখেছি , (ঠিক ওদের মত তো হয় না , ভাষাটা একটু এই , মাত্রাটা একটু অই আর ছন্দটা ওই আর কি।)
নয়তো , আমি একেবারে প্রতিবাদী দড়ি ছেঁড়া গরু ,
" আমার প্রতিবাদ
রেখে যাব বেজন্মা কুত্তার চিত্কারে ,
রসিদ খানের আহির ভৈরবে ,
শিশির পড়ার শব্দে ,
বাতাসীর কুমারিত্ব হারানোর অবাস্তব সুখে। ' (অলীক সুখ লিখলে বলবেন ঝেড়ে দিয়েছে )
কি বুঝবেন বুঝুন , তবে এটাকে ও , "কি গভীর দ্যোতনা " বলার লোকের অভাব হবে না। কেসটা একটু জটিল।
যদি ধৈর্য্য ধরে এতটা পড়ে থাকেন, তবে প্রশ্ন করতেই পারেন ," এত যে ফুটেজ খেলে , বলতে কি চাও। "
আসরের কবিতার গুন মান বাড়ানোর জন্য কিছু প্রস্তাব।
১) নিজেই নিজের লেখার বিচারক হন। প্রকাশ করার আগে নিজে পড়ুন , আর কাউকে পড়ান। বানানে সন্দেহ থাকলে দেখে নিন। কবিতার সংখ্যা নির্ণয় করেনা আপনি কত ভালো লেখেন বা মন্তব্যের সংখ্যা বলে দেয় না আপনার লেখার উত্কর্ষ।
২) আপনি ভালো লেখেন। লিখতে আপনার ভালো লাগে। ভালো কথা। নিজের পুরনো কবিতা গুলো আরেকবার পরে দেখবেন ? নিজেরই বৃত্তে ঘুরে চলছেন না তো ? ধুম হিট হলে ধুম -৫ বানাতে হবে ?
৩) মন্তব্যকারীদের দায়। এখানে লাইক দিয়ে অব্যাহতি নেই , থাকলে ভালো ছিল। সম্পর্ক ভালো রাখতে গিয়ে ভুল লেখাকে প্রতসাহিত করছেন নাতো ? আমার অমুকের কবিতা ভালো লাগে বলে, তিনি 'পাখি সব করে রব' লিখলেও ভালো বলতে হবে !
সত্যি বলতে কি এসব কথা , আমি আগেও লিখেছি , হয়ত আবার লিখব।
আবার কেন লিখব ? এই উপরে যা লিখলাম সেটা কি নতুন কিছু , না অন্যদের জানা নেই ? না নতুন কিছু লেখার হবে ?
আসর তো পৃথিবীর বাইরে নয় যে অন্য নিয়মে চলবে। কবিরাও তো রক্ত মাংসের মানুষ না কি ?