ছন্দের মেলায় যারা আসবেন তাঁরা কেউ সওদা করতে আসবেন , কেউ আসবেন পসরা সাজিয়ে।  তবে এই মেলার বিনিময় মূল্য হবে ভালোলাগা আর ভালবাসা।
মেলাটি একটু গোছানো , তাই তার মূল নিয়ম মেলে চলতে হবে বৈকি।

ছন্দবদ্ধ পদ সাধারণত দুই স্রোতে বয় , কবিতা আর ছড়া।
"আমি   পরানের সাথে খেলিব আজিকে মরণখেলা
             নিশীথবেলা।
      সঘন বরষা, গগন আঁধার
      হেরো বারিধারে কাঁদে চারিধার---
      ভীষণ রঙ্গে ভবতরঙ্গে ভাসাই ভেলা;
      বাহির হয়েছি স্বপ্নশয়ন করিয়া হেলা
             রাত্রিবেলা॥ "
এ এক  ছন্দের ঘোড়া ছুটিয়ে চলা এক অসামান্য কবিতা।

" নাতির পকেট হাতিয়ে টাকা ষাট বছরের কেষ্টরায় ,
চপ কাটলেট খেতে এলেন সাঙ্গু  ভ্যালি রেস্তঁরায়
আহার করি অধিক মাপে , চুমুক দিলো ডাবল হাফে
রাজা উজীর মরলো কতো লেকচারেতে দেশ তরায়। "
অমিতাভ চৌধুরীর এই ছড়াটি শুধু মজারই  নয়, অর্থবহও বটে।

সুকুমার রায় খেয়াল খুশীর ছড়া লিখেছেন , যেখানে অর্থের  চেয়ে মজা বেশী,
"শুনেছ কি বলে গেল সীতানাথ বন্দ্যো ?
আকাশের গায়ে নাকি টকটক গন্ধ ?
টকটক থাকে নাকো হ'লে পরে বৃষ্টি-
তখনও দেখেছি চেটে একেবারে মিষ্টি । "

ছন্দবদ্ধ কবিতায় অন্ত্যমিলের গুরুত্ব সর্বপরি , হনুমানের সাথে অনুমান মেলে , রামের সাথে আম। তবু অন্ত্যমিলের নিয়ম ভেঙ্গে "  হলুদ বন, সবুজ বাঘ / ঘাস খাচ্ছে, খাক খাক " সবার প্রিয় হয়। আবার এটা তো মানতে হবে বহুল প্রচলিত হলেও , " পাখি সব করে রব , রাতি পোহাইল।  কাননে কুসুম কলি সকলি ফুটিল। " কোনো সার্থক কবিতা নয়।
জাদুকর এ.সি. সরকার একটা সুন্দর ছড়া লিখেছেন,
"অভিরাম সাহা রায়,
অবিরাম সাহারায়।
মতে বালু পাহাড়ায় ,
যাতে বালু না হারায়।"
লেখার গুনে সজারুর সাথে মজারু ও মিলে গিয়ে বাংলায় নতুন শব্দ সৃষ্টি হয়।  
মূল কথাটা হলো , স্বরবৃত্ত ছন্দ, মাত্রাবৃত্ত ছন্দ বা  অক্ষরবৃত্ত ছন্দ কে বুঝতে ,  স্বর (বদ্ধস্বর - মুক্তস্বর ) , মাত্রা  আর অক্ষরকেও বুঝতে হবে।  এ বিষয়ে আমি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতার ক্লাস বইটি কে সবচেয়ে সহজ আর সুন্দর মনে করি।
আমার একটা ভালো পংতি নিয়ে সারা দিন ভালো কাটে , তাই ভিড়ের মাঝে সেই সব পংতি খুঁজে বেড়াই।