কবি নীরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তীর 'কবিতার ক্লাস ' নামক একটি অবশ্য পাঠ্য বই আছে। বইটিতে প্রধানত ছন্দ শেখানো হয়েছে,খুবই সোজা সরল ভাবে । ছবি আঁকা , গান, নৃত্য , অভিনয়ের মতো কবিতাও চর্চার বিষয়। ভাব , ভাবনা , ভাষার আনুপাতিক মিশ্রণ সহজ কাজ নয়।
প্রথমত , অমিত্রাক্ষর শেখার আগে ছন্দ শিখতে হবে। অনুপ্রাস , যমক যেমন শিখতে হবে , তেমনি উপমা , রূপককেও অবহেলা করা যাবে না। ' শেফালিকা তলে , কে বালিকা চলে ' বা ' আমি পরানের সাথে খেলিব আজিকে মরণ খেলা নিশীথ বেলা ' , এই দুইয়ের মধ্যে ভাবের সাথে ছন্দের প্রয়োগ বোঝা দরকার। তবে শুধু ছন্দ আয়ত্ব করলে কাব্য গুন না থাকলে , ছন্দবদ্ধ পংতি কবিতা হয়ে উঠবে না ।
রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন , "কবিতা বোঝবার জিনিস নয়, বাজবার জিনিস। " এমন কবিতা তো দুর্লভ নয় , যা বাজবার সাথে ভাবায় ও বটে।
"তোমারই প্রেরণা পেয়েছি
বারে বারে আনন্দে গেয়েছি
নিরঙ্কুশ এ জীবনের কলনাদে ভরেছে অম্বর ।
হে পঁচিশ নম্বর
মধুবংশীর গলি,
তোমাকেই আমি বলি ।" (জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র )
" ঠকা ঠাঁই ঠাঁই, কাঁদিছে নেহাই
আগুন ঢুলিছে ঘুমে ,
ক্লান্ত সাড়াশি , শ্রান্ত ওষ্ঠে
আলগোছে ছেনি চুমে।
হেরোগো হেথায় হাঁপড় হাঁপায়
হাতুড়ি মাগিছে ছুটি " (যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত )
অনুরোধ আমার , প্রথমে ছন্দ আয়ত্ব করুন , কঠিন কিছু নয়। বেড়ার নিয়ম জানলে , পথের নিয়ম আপনি ই শিখে যাবেন। আর কাব্য বোধের জন্য অনেক পড়া দরকার , পড়ুন।
কবিতার আসরে কবিদের দিনে একটি করে কবিতা লেখার অনুমতি রয়েছে। আমার মতে যেহেতু কবিতার কোনো বাছাই হয় না , তাই প্রকাশ করার আগে কবিদের একটু সংযমী হবার প্রয়োজন আছে। অনেক ভালো কবিতা , অনেক কবিতার মাঝে হারিয়ে যায়। আমি বুঝি প্রতিটি কবিতাই কবির প্রিয় , কিন্তু আসরের সার্থে , আর কবিতার স্বার্থে কবিতার সংখ্যায় নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
কবিতার যে পাঠক চাই।