আবদ্ধ আর্তনাদ

বাবা যে কি ছিলেন, বুঝিনি সময়ে !!
সময়ের হাত ধরে, কখন যে
বাবার সাথে দূরত্ব কিনেছি বিনে পয়সায়,
তাও ঠিক মনে পরেনা স্মৃতির আঁশ গুলো উপড়ে ফেলে !
বাবা মানেই ছিল সরকারী ব্যাংকের
নগদ বিতরণের উন্মুক্ত জানালা
অথবা একান্ত জবাব দিহিতার সীমানা পেরিয়ে
গুপ্ত ধনের মূল্যহীন পেতলের কলস ।
বাবার হাসি গুচ্ছ যেন, বাল্য কালের অনাদরে হারিয়ে ফেলা
পুতু্লের বিচ্ছিন্ন সলীল সমাধির
ঘুনে ধরা বাঁশের চাঁটাই হয়ে হারিয়ে গেছে আপনাতেই।
বজ্র পাতের মত বাবার ধমকের গুঞ্জনও
আজ ধমনীর রক্ত স্রোতে
সিক্ত হৃৎপিণ্ডের প্রকোষ্ঠে আগন্তক মুসাফির।
বিশেষ আদরে তুলে রাখা
রোগাক্রান্ত তুচ্ছ কঞ্চির ভীতির আড়ালে,
পড়তে বসানোর বাবার সেই প্রত্যহ প্রচেষ্টা,
আজও সৃতির সহযাত্রায়
মানব দেহের অপ্রয়োজনীয় অ্যাপেন্ডিক্সের মত অবহেলিত ।
অযৌক্তির বায়নার দুরন্ত ঝড়ের মুখে
নির্জনে নিঃস্বার্থে  দাড়িয়ে থাকা বাবা,
কোথায় যেন চর ভঙ্গনে বিলীন কুড়ে ঘরের
জীর্ণ তৃণগুচ্ছ হয়ে মিশে আছে তাও জানা নেই।
মায়ের উন্মুক্ত ভয় প্রচ্ছদের মুখে
নির্ভীক ঢালের মত সাইক্লোন শেলটার হরে দাড়িয়ে থাকা বাবা
হরপ্পার পাথুরে ক্ষয়িষ্ণু দেয়াল লিপির অভিধানে
ঠাই নিয়েছেন আজ সুপ্ত অভিমানে ।
সারাদিনের পুঞ্জীভূত নালিশের বহর সেজে
বিকেলে, বাবার ঘরে ফেরার অপেক্ষা ক্ষণ
পুরনো চাবি দেয়া হাত ঘড়ির মত,  
যাদুঘরে কাঁচের প্রদর্শন প্রকোষ্ঠে বন্দী জীবনে, দর্শন প্রার্থনায়
অনুজের অপেক্ষায় আজ ক্লান্ত রাত কাটায় !  
সন্তানের সামান্য খ্যাতি কলবরে
যার স্ফীত বুকের স্পন্দনে বিশ্ব জয়ের
দামামা গর্জন, কম্পিত করেছিলো পরিচিত পরিসর!  
আজ একান্ত অবসরে, বাতাসে মায়ের আচলের
চীর সুখের গন্ধ ভেসে আসে থেমে থেমে।    
রেশমি কাপড়ের মসৃণ ছোঁয়ায়,
মায়ের চুলের স্বর্গীয় পরশে ফিরেযাই
জন্ম ইতিহাসের প্রচ্ছদ পাতায় ।
গোছানো আচ্ছাদনের ভাঁজে লুকোচুরি খেলে
প্রতি নিয়ত খাদ্য ভাণ্ডার আবিষ্কার প্রচেষ্টায়
মায়ের গন্ধ আজও স্পষ্ট মনে পরে ।
তবুও বাবার অভিমান ভাঙেনি
আজও বাবা ঝাপসা আলোছায়ার খেলা ঘরে
নিজেকে আড়াল করে, আমার আগামী রচনায় অট্টহাসির
প্রলেপ মেখে চলেছেন ।
আজ আমিও বাবা, তর্জনীর অগ্রভাগ ভারি করে  
নূতন ভ্রূণের বেড়ে ওঠার আঁতুড় ঘরে খুজে ফিরি
অভিমানী সেই মানুষটির আগচরে রেখে যাওয়া
সৃতি সুড়ঙ্গের আবন্ধ আর্তনাদ । ।।