আমার গ্রামের পাশের বাড়ির ছেলে বম্বল ভাই,
খেয়ে-দেয়ে ঘুমায় শুধুই পড়াশোনায় মন নাই,

চর্বি জমেছে পেটেতে তার, যেন বিশাল ঢোল,
প্লেটে করে কখনো খায় না,লাগে আস্ত ভোল।

হঠাৎ একদিন মাঠে হাযির,খেলবে সে ক্রিকেট,
কলা গাছের বাকল কেটে বানিয়েছে এক ব্যাট,

হেলমেট বানিয়ে এনেছে চিড়ে জাম্বুরার খোলস,
বম্বল ভাই  খুব  পরিশ্রমী, কে  বলেছে  অলস?

মাঠে আসতে ডেইলি করে পাঁচ-দশ মিনিট লেট,
মাঝে মাঝে পরে আসে সুপারির ডালের প্যাড,

কখনো মাথায় লাগিয়ে আসে মাটির তৈরি হাঁড়ি,
খেলায় মাঝে আউট হলেই চলে যায় সে বাড়ি!

বল হিসেবে বানিয়ে আনে তালের শুকনো আঁটি,
লজ্জা স্থানে বেঁধে নিয়ে আসে স্টিলের তৈরী বাটি,

পলিথিনে সে কাপড় ভরেই বানিয়ে ফেলে ফুটবল,
রেফারির জন্য বাঁশি বানাতে কেটে আনে পেঁপের নল।

পড়ার কথা যে বলতে যায়, তারে করে বকাঝকা,
কাজের বেলায় ঠনঠনা ঠন,খাতার পাতা থাকে ফাঁকা,

বাঁশের বন্দুকে সদা ভরে রাখে গাছের বীজের গুলি,
আইসক্রিম-চকলেট কিনে না দিলে উড়াতে চায় খুলি।

কলা গাছের ডগা দিয়ে সে বানায়  অসংখ্য ঘোড়া,
সারা দিন গ্রামে ঘোড়া চালিয়ে,ঘুরে ফিরে উড়াধুরা,

বাচ্চাদের কাঁধে জোয়াল দিয়ে বলে,তরা গরু আমি চাষী,
লাঙ্গল-মই টানবি  তরা, লাঠি হাতে  আমি  আছি।

তালের পাতায় চরকি বানিয়ে দৌড়ে চলে অবিরত,
চশমা-ঘড়ি  বানিয়ে  আবার  বিক্রি  করে শত-শত,

স্কুল ব্যাগেতে মা ভরে দেয় রুটি-ডিম আর বইগুলি,
এই ফাঁকে সে ব্যাগে ভরে নেয় তার প্রিয় ডাংগুলি,

স্কুল ফাঁকি দিয়ে বসে থাকে সে একাই নদীর ধারে,
বই-খাতা ছিড়ে নৌকা বানিয়ে ভাসায় সারে সারে।

বিকাল বেলা মাছ ধরে সে বাড়ির পাশের খালে,
সারা বছর ভরা থাকে সেথা রুই,সিং আর চিতলে,

মাঝে মাঝে সে সবাইকে নিয়ে খেলবে গোল্লাছুট,
যতবার সে ছুঁটতে চেয়েছে,ততবার খেয়েছে হোঁচট!

কখনো কখনো বিমান বানায়, কখনো উড়ায় ঘুড়ি,
সন্ধ্যা সময় ফুল-ফল কুড়িয়ে ফিরে আসে নিজ বাড়ি,

ঘুমপাড়ানির মাশি-পিসি না শুনে আসে না চোখে ঘুম,
গভীর রাতে আবার গল্প শেষ দিতে হয় ললাটে চুম।