বহুপ্রতীক্ষার পরে মধ্যাহ্নের গা পোড়া এক দুপুরে,
মেরুন-আলখাল্লায় ভীরু-পায়ে—
                    ধেয়ে এসেছিল সে আমারি তরে।
সাহস নিশ্চুপ ব্যস্ত নগরী প্রিয়ার লক্ষ্মী-চরণে,
বাতাস যেন গাহিছে গান তাহারি প্রণয়-স্মরণে।

কাছে এসে সন্নিকটে তাকাল মোর পানে চেয়ে,
পরদেশী, এ কি সেই তুমি—
            যার গান দিন-রাত অন্তর যায় গেয়ে?
ডাগর-চোখে মুচকি হেসে বলল এবার চল,
ফুটপাত মোদের পথ দেখিয়ে সূর্য সঙ্গ নিল।

হাঁটিয়াছে সে মোর এপাশে ওপাশে নিস্তব্ধ যেন সব,
ঝ’রেছে কুসুম সুবাস ছড়িয়ে—
                 লিলুয়া-বাতাসে নীরব সমস্ত কলরব।
অচেনা সেই সমুদয় পথে সে-ছিল মোর চিরচেনা-সাথী,
সহসা গেল বেলা ফুরিয়ে নগরে জ্বলিল সন্ধ্যার-বাতি।

নগরের এক অরণ্যে কেটেছে প্রণয়নের সেই ক্ষণ,
হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত পা-যুগল—
                তবুও ক্লান্ত হয়নি তাহার চপল-মন।
সকল ক্লান্তি গিয়াছে মুছিয়া সেই সবুজের মাঝে,
সাজিয়াছে প্রিয়া মোর অপরূপা প্রকৃতির সাজে।

হাঁটিয়া ফিরেছি ব্যস্ত সে-নগরীতে মোরা বহুপথ,
পায়ে পায়ে ছন্দ তু’লে—
            মুখরিত হ’য়েছিল প্রণয়নের সেই রথ।
অপলক তাকিয়ে কথাচ্ছলে দেখিয়াছি ডাগর-আঁখি,
পাশে ঘেঁষে হাজারো ছুতায় অনুভবে তোমায় মাখি।

জানি হয়নি বলা বহুকথা, মোর ক্ষুদ্র কাব্য-ভাষায়,
উদাসিনী, জানো তো তুমি—
              কত উদ্বিগ্ন-আকুলতা রয়েছিল সেথায়।
কত সে কথা, কত সে গান, কত সে নতুন-স্মৃতি;
হৃদ-মাঝারে পুষিয়া রাখিও এই প্রেম-নিরবধি।

বিদায়-সন্ধ্যায় জলে ভেজা চোখ—
                       পাষাণী-বক্ষ ছিল তাহার ভার,
ভীরু-কণ্ঠে মায়া জড়িয়ে বলেছিল সে—
                               “আসিবে কবে আবার?”










*মিরপুর ১৪ নাম্বারে বসবাসরত এক পুলিশের তরুণী কন্যার সাথে প্রথম সাক্ষাতের পরে রচিত