মিথ্যে দিয়ে বাঁধিও না ঘর অচিরেই যাবে প’ড়ে,
যতই পোক্ত করো না হে, আসলে তাহা নড়বড়ে।
মিথ্যে-বচনে গৃহ গড়িয়া দেখাও কে আছে সুখে?
অব্যক্ত-পীড়ন উরসে চাপায়ে মরিছে ধুকে ধুকে!
মিথ্যের-মালা গলে প’ড়ে নাহি পাহিয়াছে কেহ কদর,
ক্ষণিকের তরে থাকে যদিও তা চির নয় সে সমাদর।
মিথ্যের-পুষ্পে গাঁথিলে মালা অগোচরেই যাবে ঝ’রে,
রাখিতে কি পারিয়াছে কেহ মিথ্যেকে মুষ্টিবদ্ধ ক’রে?
মিথ্যের-জলে করিলে স্নান তিলে তিলে পচিবে দেহ,
মিথ্যেকে সত্যে বচনে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছে কি কেহ?
বন্ধু, আপন চক্ষু মেলিয়া দেখ খুলিয়া মিথ্যের-বাণী,
মিথ্যেকে আপন করিয়াছে যে, বহিছে নিন্দার-গ্লানি।
মিথ্যের-যাত্রা অতীব সহজ বাধাহীন-শূন্য-ফাঁকা,
অতিবাহিত ক্ষণিকের পরে বোধ হয় ধূসর-খাঁ-খাঁ।
মিথ্যের-রথে ল’ড়েছে যাহারা, মিথ্যেই তাহাদের যম!
ভেতরে তাহার অন্তর পচা, নাহি ফেলিয়াছে স্বস্তির-দম।
মিথ্যের-বসন জড়ায়ে গায়ে সাজিয়াছে যে ভদ্রলোক,
ভেতর তাহার সংকীর্ণতায় পূর্ণ, হৃদয় ভর্তি দুঃখ-শোক।
মিথ্যের-ধ্বনি বাজে বিকটে তবে তাহা কেবলি ভ্রান্ত!
মিথ্যের-স্লোগান দিয়ে কবে কাহার হৃদ হইয়াছে শান্ত?
মিথ্যে হ’ল শয়তানের বাণী, চির-অভিশপ্ত যে,
তার পথে চলিয়া পরিশেষে রক্ষা পাহিয়াছে কে?
মিথ্যে-যুদ্ধে জয়ী হইয়াছে কোথা আছে এ-ইতিহাস?
মিথ্যের-অসি হস্তে নিয়াছে যে, করিয়াছে স্বীয়-সর্বনাশ।
আপন জ্ঞান বিপন্ন করিয়া, গাহিয়াছে যাহারা মিথ্যের-গান,
খুঁজিয়া দেখ ধূলির ধরায়, পাহিয়াছে কি তাহার কভু মান?
মিথ্যের-কিতাব লেখিয়াছে যাহারা, দেখ চেয়ে তাহাদের আঁখি,
ভয় তাহাদের গ্রাস করিয়াছে, হস্তে লেখনী উঠিয়াছে কাঁপি’ কাঁপি’।
না হয় আমি মিথ্যে কহিছি, তোমরা খুলিয়া দেখ গ্রন্থ;
মিথ্যে-তরীর হইয়া নাবিক, কে পাহিয়াছে খুঁজিয়া প্রান্ত?