চৈত্র-দাহে পুড়িয়াছে বুক প্রিয়া করিয়াছে ছল্!
শিউলি-মালা গাঁথিয়া বসিনু কা’কে পড়া’ব বল্।
থাকিবে না তুমি আমারি হ’য়ে কহিছিলে সে কথা,
বুঝি নাই তবে সহসা দেবে এমনি মরণ-ব্যথা।
তমসাঘেরা এই বিভাবরীর নাহি হ’লে তুমি সঙ্গী,
নিশি জাগিয়া অশ্রু মুছি একা দুখেরা কারাবন্দী।
কৃষ্ণকণ্ঠে শুনিয়ে ছিলেম তোমায় কত কবিতা-গান,
স্মৃতি-সরণি জুড়িয়া আজি কেবল মনস্তাপ-অভিমান।
বেদনার তরী বাইছি একা দু’কূল সম আঁধার,
রিক্তের বেদন বোঝেনি কেউ করেনি মোরে পার।
সহসা নিশীথে তন্দ্রা ভাঙিয়া কত ডাকিয়াছি তারে,
আপনারে ক’রে দান নাহি ফেরাতে পারিলাম যারে।
তবে কি বঁধুয়া ভুলিয়াছ তুমি আদি সব কথামালা?
কেবলি কি মনে রয়েছে মোর, তাই বাড়ছে বিরহ-জ্বালা!
মুছিয়া মিটাইও স্মরণ সমূহ রাখিও না আর মনে,
বিষাদ প্রাণে নিরুদ্দেশ হইব একাকী সঙ্গোপনে।
পথহারা পথিক তাই হয়ত বাঁধিতে পারিনি প্রাণে!
ধূলির ধরায় স্বার্থ ছাড়িয়া কাছে কে মায়ায় টানে?
পুষ্প-কানন-গৃহ জুড়িয়া আজি যাতনার-সমাহার,
খিড়কি ভেদিয়া ঢুকিয়াছে কক্ষে তিমির-অন্ধকার।
বহুকাল পর শিউলি-প্রভাতে আসে যদি মোর স্মরণ,
আঁচলে লুকায়ে নেত্রদ্বয় জল গড়াতে করিও বারণ!
ভাঙিবে তব ভুল, ফুটিবে নব-ফুল, কুসুম-বনে একা,
খুঁজবে এদিক-সেদিক আর নাহি পাবে সেই পথিকের দেখা।