রাবন গাথা অনেক হলো, অন্য চরিত গাই
বিপুলাকার কুম্ভকর্ণ, বাদ কেন যায় ভাই?
কোন অংশে খাটো মেজ, প্রকান্ড বীর যে সে
ঘুম এর রোগ টা থাকার দরুন, কম যায় সে কিসে?
কুম্ভকর্ণের চাকর যে সে, সুখের চাকরি আজ
ছ’টি মাসের মধ্যে শুধু, একটি দিন ই কাজ
মেজ ভাই এর ঘর খানা বেশ, শব্দ দূষণ মুক্ত
নাসিকা গর্জন এর আওয়াজ, ঘর এর সাথেই যুক্ত
কুম্ভকর্ণ’র পালঙ্ক টা, লোহায়, কাঠে, মোড়া
কুড়ি মিটার লম্বা যে সে, নাট-বল্টু জোড়া
কাঠ এর ফাকে ছারপোকা সব, আছে বড়ই সুখে
খাদ্য প্রচুর, অল্পায়াসে, যায় যে তোলা মুখে
এই ঘরেতে নেই যে কোনো, বৃহদাকার আয়না
কুম্ভকর্ণের রূপের সাথে, তা কিছুতেই যায়না
সখ এর মধ্যে আছে নরুন, নখ কাটিবার তরে
আকার তাহার কোদাল প্রমান, দেখলেই ভয় ধরে
ওঠেন যেদিন নিদ্রা হতে, ভাঙ্গেন যে আরমোড়া
তত্সহ ভাঙ্গে যে তার, খাটের পাটা জোড়া
কাঠের ফাঁকে লুক্কায়িত ছারপোকা দের দল
হুরমুরিয়ে দিল যে দৌড়, ভাঙছে বাসার কল
এমন সময় তরিঘরি, চাকর ব্যাটা আসে
তেলের গামলা কাঁধে নিয়ে, অন্যজন ও পাশে
পাঁচ মন তেল লাগবে বটে, মাখতে সারা বপু
দশ জওয়ান এর নেতা যে সে, নাম টি তাহার অপু
অপুর নজরদারি তে যে, হলো শুরু মর্দন
দশ জওয়ান এর ঘাম ছুটে যায়, পৌছে সবে গর্দন
তিন টি ঘন্টা দলাই মলাই, হলো মাখা তেল
স্নান এর সময় হবে আবার, নতুন সে এক খেল
কুম্ভকর্ণ দাড়ান উঠে, বাড়ান একটি পা
মহল যেন উঠলো কেপে, পড়ল যেন ঘা
রাবন রাজা আসেন ছুটে, মনে বড় ভয়
উল্লসিত হন যে দেখে, ভাই কে তৈলময়
স্নানাগার এর দিকে চলেন, কুম্ভকর্ণ বীর
দেখতে যে পায় সবাই তাহার, উন্নত সেই শির
স্নান ঘরেতে দন্ডায়মান, হস্তি-যুগল বেশ
শুন্ডে করে জল ছড়াবে, থাকবে বৃষ্টি-রেশ
ঘন্টা-খানেক স্নান এর পরে, হস্তি-যুগল কাবু
গাত্র-মোছা সেরে হলেন, কুম্ভকর্ণ বাবু
ছমাসের অভুক্ত পেট, জলছে আগুন তায়
লঙ্কাবাসী ভয়ে ভাবে, “আমার খাবার যায়”
রাবন রাজা, সু-প্রশাসক, বড়ই চিন্তাশীল
খাদ্যদ্রব্য জুটিয়ে রাখেন, পাহাড় প্রমান ঝীল
কুম্ভকর্ণ বসেন খেতে, বাকি সব তটস্থ
এত খাবার আনা বয়ে, হবে বড্ড কষ্ট
শত মন চাল, ভাতে বেড়ে, গোটা শ-এক পাঠা
রামপাখী টা খাওয়া বারণ, বলেছেন তার জ্যাঠা
শাক-সবজি, সেও প্রচুর, গামলা গামলা আসে
পড়ামাত্র পাতে যে সব, উবে যায় আকাশে
ভাতের শেষে মন্ডা-মিঠাই, এলো শত শত
মুহুর্তে সব উধাও হলো, যেন হলো গত
জনা কুড়ি পরিচারক, ঘন্টা তিনেক ঘুরে
মাথা ঘুরে পড়ল যে সব, হেসেল-খানা’র দোরে
এমন সময় কুম্ভকর্ণর জাগলো অনুকম্পা
সিংহনাদ এর মতন করে তোলেন ঢেকুর লম্বা
নগরবাসী স্বস্তি পেয়ে, ছাড়ে দীর্ঘ্যশ্বাস
আগামী ছ’মাসের মতন, উঠছে নাকো বাস