না।
আমি রচিনি কোনো শুভ্র কাননে
পুষ্পিত সমারোহে স্বপ্নময় বিভব।
বেদনার পাহাড়ে জমাট বেঁধে আছে যতো
মাতাল গাছেরা টইটুম্বুর বৃষ্টি মাথায় নিয়ে।
এদিকে ঋত্বিকহাওয়া উন্মাতাল যাবতীয়
সৃষ্টিকে নড়বড়ে ক’রে দিয়ে যায় বার বার
আর বিত্তবাসনা আমার চাপা প’ড়ে আছে
বিষয়ের ভারে। আমি খুঁজে মরি পথ,
আমি এক পথহীন, করাল অন্ধকারে।

আমার স্বপ্নেরা হতে চায় মেঘ।
পাখি হতে চায়। স্বপ্নিল পাখায় ভর করি’
উড়ে যেতে চায় অসীম নীলিমায়।
তবু আমি স্থানু হয়ে আছি। পাহাড়ের গাছ
শিকড় সব গেঁথে গেছে গভীরে আমার
মোহনললাটে বয়সের বলীরেখা
আমাকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে বিভক্ত করে।
দুঃস্বপ্নের মাঝে সুখনিদ্রার যাপিত রজনীর
পরিসমাপ্তি ঘটে অকস্মাৎ।

আমাকে তবু ঘিরেই রাখে পরজীবীরা
নানাবিধ ছত্রাক সরীসৃপ গিরগিটিরা
ইত্যাদি মিলে কেবলই মনস্তাপ, আর্তনাদ
আমাকে ফেরাতে পারে না কোনো কিছুই।
কোনো প্রিয়তমার উদ্বাহু আলিঙ্গন
উষ্ণ ঠোঁটে অকথিত ভাবের নীরব প্স্রবন।
কোথায় দোলে এতোটুকু শান্তি আর শান্তি কেবল –
আহা! আমার স্বপ্নময় প্রশান্তি!
হা! কোথাও নেই! এমনকি নেই?
কোনো সন্ত্রাসী নেই দিবালোকের
প্রাণবন্ত ক্যাম্পাসে?
কোনো রগকাটা শিবির কাপালিক-ক্ষুর নিয়ে
তাড়া করে না নব্য কিশোরের
স্বপ্নময় ক্ষিপ্র ভবিষ্যৎকে?

আমি নড়বড়ে বর্তমান –
যার ভবিষ্যৎ বলতে কিছুই নেই সামনে –
তাকে নিয়ে কি বকুলের
সুগন্ধিমালা রচনা করতে পারি না সম্ভাবনার?
শৃঙ্গারমত্তা নারীর এক টুকরা দেহপিণ্ডে
গলিত মোমের পোড়াগন্ধ আবিষ্কার করতে পারি না?

একটি পলায়নপর কুকুরের নমিত লেজের নিচে
অনেক ভয় জমাট থাকে।
অন্য কুকুর তাড়া ক’রে ছুটে এলে, সেই পুঞ্জীভূত ভয়
আইসক্রিমের মতো সাহসের উষ্ণতায়
ক্রমে গ’লে গ’লে গণতন্ত্র-স্কোয়ার
প্লাবিত করে। এখানেই স্বৈরশাসকচক্রের
পতনের ঘটনা অবশ্যম্ভাবী ক’রে তুলেছিলো
বিপ্লবী প্রাণবন্ত নূর হোসেনরা!
আবু সাঈদরা! মুগ্ধরা!

কিন্তু আজ! সবাই দেখে –
আত্মদানকারী বিপ্লবীদের রক্তের উপর
বিশ্ববেহায়া এবং তার দোসর রাজাকারের উদ্যত
কাটা রাইফেল মুহুর্মুহু গুপ্তহত্যায় মেতে ওঠে।
নরঘাতক হেরোদ দি গ্রেটেরা অবলীলায়
নবজাতকের মুখে ঢেলে দেয় প্রাণঘাতী গরল
ইথানল গ্লাইকোল!
আতংকিত জনক-জননী কোন্ মিশরে গিয়ে
আশ্রয় নেবে তাদের নবজাতক সহ?

আমার রচিত একটি উঠোন আছে।
এখানে অনেক বৃক্ষ আমি রোপণ করেছি,
এই বিশ্বকে গ্রিনহাউজ বিপর্যয় থেকে
বাঁচাবো ব’লে। কিন্তু! পুষ্পিত কাননে আমার
সবুজপত্র নিঙড়ানো অক্সিজেনের
সংশ্লেষণ ঘটেনি এখনও হায়!

এই দ্রুত ক্ষয়িষ্ণু,
স্খলিত বিশ্বে নব ধূমকেতুর আগমন হোক তাই
অবশ্যম্ভাবী। ত্বরান্বিত।
সকল বিপর্যয় থেকে রক্ষা করুক বিশ্বকে।
আমার প্রাণিত ভাবরাজ্যে
অনূদিত হোক প্রেমমঙ্গল কাব্যমালা।
আজ তাই একটি মানবীয় ধ্বংসস্তুপের উপর
রচিত হবে নবতর বেথলেহেম!
একটি শিশু কেঁদে উঠবে, ‘শান্তি চাই! শান্তি চাই!’ ব’লে।
শান্তিকামী পণ্ডিতেরা ছুটে আসবেন
গন্ধরস আর উপহার সামগ্রী নিয়ে।

পাহাড়ের গাছেরা প্রচন্ডগতিতে
উড়াল দেবে, তাই।
লাখ শহীদের স্মৃতিস্তম্ভে উড়বে বিজয়পতাকা।
আর এরই মাঝে জগত পা রাখবে
নবতর এক শতাব্দীতে।

একটি শিশু বেড়ে উঠবে
পরম প্রশান্তিতে; এই পৃথিবীর
মা মেরীর শান্তিময় কোলে।
আহা! প্রশান্তির আঁচলে!